বিএনপিরাজনীতি
ট্রেন্ডিং

শিগগিরই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ঘরোয়া আলোচনায় তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন।

এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দীর্ঘপ্রবাসে থাকা তারেক রহমানের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম নিয়েছে। লন্ডনে রাজনৈতিক নির্বাসনে থাকা তারেক রহমান ২০০৮ সালের পর থেকে দেশে ফেরেননি। তবে চলমান রাজনৈতিক পালাবদলের প্রেক্ষাপটে এবার তার ফেরার বিষয়টি দলীয়ভাবে বেশ গুরুত্ব পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “তারেক রহমান নিশ্চয়ই দেশে ফিরবেন, অবশ্যই ফিরবেন। শিগগিরই ফিরবেন।”

যদিও তিনি তারিখ বা নির্দিষ্ট সময়সীমা জানাননি, তবে এমন দৃঢ় ভাষায় ঘোষণার ফলে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হতে পারে।

একই সময় মির্জা ফখরুল জানান, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক রহমান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকের নির্দিষ্ট দিনক্ষণ তিনি জানাননি, তবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এপ্রিলে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাওয়া হলে, মির্জা ফখরুল বলেন, “এই বিষয়ে আমরা এখনো দলগতভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে আমরা আশা করি, সরকার বাস্তবতা বিবেচনায় এনে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমি প্রথম দিন থেকেই বলছি—টাইম ইজ নট গুড ফর ইলেকশন। এপ্রিল মাসে রোজা চলবে, ঈদ শেষ হবে, তার কয়েক দিনের মাথায় নির্বাচন। প্রার্থীদের ওপর কী পরিমাণ চাপ পড়বে, তা কল্পনা করাই কঠিন। রোজার মধ্যে রাজনৈতিক কর্মীদের দিনভর প্রচারণা চালানো, নির্বাচনী কর্মসূচি পালন—সবই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।”

রসিকতার সুরে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি নিজেই চিন্তিত যে, প্রতিদিন আমাকে ইফতার পার্টি করতে হবে। এটা কোনো মজার ব্যাপার না—এটা খুবই কষ্টকর ও ব্যয়সাপেক্ষ।”

তার মতে, নির্বাচন এপ্রিল মাসে হলে প্রার্থীদের ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে, যা রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য ইতিবাচক বার্তা দেবে না। “আমরা তো বলি নির্বাচনী ব্যয় কমাতে হবে। অথচ ওই সময় নির্বাচন হলে ব্যয় শুধু বাড়বে, কমবে না।”

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, “এপ্রিল-মে মাসে প্রচণ্ড গরম পড়ে। আবহাওয়ার অবস্থা ভালো থাকে না—ঝড়বৃষ্টি লেগেই থাকে। আমাদের দেশে নির্বাচনী সংস্কৃতিতে জনসভা, র‌্যালি, প্রচারণা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রোদের মধ্যে মানুষকে এনে জনসভা করা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হবে। রাত্রিতে মিটিং করতে হবে, কিন্তু তখনও আবহাওয়ার ঝুঁকি থাকবে।”

তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে, আবহাওয়ার এই প্রতিকূলতাগুলো বিবেচনায় নিয়ে অতীতেও নির্বাচন সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারির মতো শীত মৌসুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, “দুইবার ব্যতিক্রম হয়েছে, তখন নির্বাচনে নানা রকম ঝামেলা তৈরি হয়েছিল।”

নির্বাচন কেবল সাংবিধানিক দায় নয়, এটি রাজনৈতিক বার্তা দেয় বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “একটি সময়সীমা এবং প্রেক্ষাপট রাজনৈতিক বার্তা তৈরি করে। যদি এমন সময় নির্বাচন হয়, যখন জনগণের স্বাভাবিক অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়, তখন সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আমরা চাই, নির্বাচন হোক, তবে সেটি যেন গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিকূলতা-মুক্ত হয়।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে। বর্তমান সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলগুলোর সম্পর্ক, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক মহলের চাপের প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে।

তবে এটাও প্রশ্ন—দেশে ফিরলে তিনি আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হবেন কি না, এবং তার নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কীভাবে নিয়ন্ত্রিত বা পরিচালিত হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button