কাবাডি খেলায় বগুড়ার আশার আলো সাদিকা

শখ থেকে খেলা। সেই খেলাই এখন পেশা হয়েছে বগুড়ার ইসরাত জাহান সাদিকার। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া নারী এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য প্রশিক্ষণ শিবিরে চান্স পেয়ে আলোচনায় এসেছিলেন। ইরানে যাওয়া না হলেও কাবাডি জাতীয় দলে চান্স পান তিনি। এর মধ্যে নেপাল থেকে ঘুরেও এসেছেন সাদিকা।
সাদিকা বগুড়া শহরের বৃন্দাবন উত্তর পাড়ার আব্দুল কাদের রনির মেয়ে। ২০১৭ সালে বগুড়ার ভান্ডারি মজিবর রহমান স্কুলে পড়াকালীন শখের বশে কাবাডি খেলা শুরু করেন। এরপর বগুড়া কাবাডি একাডেমির সাথে যুক্ত হন। সেখান থেকেই উত্থান। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ পুলিশের মহিলা কাবাডি দলে আউটসোর্সিংয়ে যুক্ত হন।

কাবাডি ফেডারেশনের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২০-২৫ ফেব্রুয়ারি ইরানে নারী এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপ এবং মার্চে ভারতে নারী বিশ্বকাপ কাবাডি অনুষ্ঠিত হয়। এতে নারী এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপ ও নারী বিশ্বকাপ কাবাডিতে বাংলাদেশ নারী কাবাডি দল অংশগ্রহণ করবে। টুর্নামেন্ট দু’টিতে ভালো ফলাফলের লক্ষ্যে আগামী ১০ জানুয়ারি ২০২৫ হতে ধানমন্ডি সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে নারী কাবাডি দলের আবাসিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শুরু হয়।
এই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বগুড়ার ছিল দুজন অংশগ্রহণের সুযোগ পান। তারা হলেন ইসরাত জাহান সাদিকা এবং বগুড়া করোনেশন ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড কলেজে এইচএসসি ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আছমিতা আক্তার ঐশী।
বগুড়া কাবাডি একাডেমির সংশ্লিষ্টরা জানান, চান্স পেয়েও পরবর্তীতে ইরান ও ভারতে যাওয়া হয়নি ওই দুজনের। ঐশীর পায়ে আঘাত লেগে আহত হওয়ায় যেতে পারেনি। আর সাদিকার জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকায় পাসপোর্ট তৈরিতে ঝামেলা হয়েছিল। এই কারণে সাদিকাও শেষ মুহুর্তে দেশের বাইরে যেতে পারেনি।
তবে সাদিকার আফসোস কিছুটা লাঘব হয়, নেপালের কাঠমুন্ডুতে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজে অংশ নিয়ে। চলতি বছরের ২০-২৫ এপ্রিল পাঁচটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
সাদিকা জানান, টেস্ট সিরিজে নারী দল জয় লাভ করেনি। তবে প্রথম ম্যাচে আমি খেলেছিলাম। িএটা আমার জন্য বড় পাওয়া। পরে দুটা ম্যাচে সিনিয়র আপুদের বদলি হিসেবে খেলেছিলাম।
কাবাডি খেলায় যুক্ত হওয়ার প্রসঙ্গে সাদিকা বলেন, ২০১৭ সালে স্কুলে বড় আপুদের দেখে খেলতাম। স্কুলে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলে পুরস্কার পেয়েছি। তখন তো শখ থেকে খেলতাম। আপুদের সাথে খেলতে ভালো লাগতো।
‘পরে ২০১৯ সালে বগুড়া জেলা কাবাডি একাডেমির সাথে যুক্ত হই। জাহিদ ভাইসহ অন্য কোচদের সাথে পরিচয় হওয়ার পর খেলার নিয়ম, কৌশল শিখলাম। জেলা পর্যায়ে বেশ কয়েকটি খেলায় আমরা সুনাম পেয়েছি। এরপর ২০২৩ সালে যখন পুলিশ দলে চান্স পেলাম, তখন থেকে আমার আশা আরও বড় হয়েছে। আমার ইচ্ছা বিদেশের মাটিতে খেলে দেশের তথা বগুড়ার নামকে উজ্জল করা।’
দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে বড় সাদিকার জীবনে কাবাডি খেলায় সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তার পরিবার। সাদিকা জানান, আমাদের দেশে কাবাডি খেলায় মেয়েদের অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকে। এই খেলায় হরহামেশা ইনজুরি হতে পারে। এ জন্য অধিকাংশ পরিবার তাদের মেয়েদের কাবাডি খেলতে দিতে রাজি হয় না। কিন্তু আমি এই দিক থেকে সৌভাগ্যবান। আমার বাবা-মা সব সময় আমাকে খেলার প্রতি উৎসাহ দিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন কর্তৃক প্রতিযোগীতায় ২০২৩ সালে প্রথমবার বগুড়া কাবাডি একাডেমি অংশগ্রহণ করে। এতে ৩য় স্থান অর্জন করে তারা। এ ছাড়া ছেলে ও মেয়ে সদস্যরা নিয়মিত বাহিনী ও ঢাকার ক্লাব গুলোর হয়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে।
বগুড়া কাবাডি একাডেমির সভাপতি জাহিদ হাসান জানান, বগুড়ায় কাবাডি একাডেমি চালু হওয়ার পর থেকে বগুড়ায় কাবাডিতে ছেলেরা ও মেয়েরা অনেক এগিয়ে গেছে। তবে নারীদের জন্য আমাদের চ্যালেঞ্জটা বেশি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এইচএসসির পর মেয়েদের খেলতে দিতে চায় না তাদের পরিবার। তার মধ্যে থেকে আমরা বেশি কিছু রত্ন পেয়েছি। সাদিকা এমন এক উজ্জল সম্ভাবনা।