অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গুম সংক্রান্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সময় সংঘটিত গুমের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ‘ব্যক্তিগত অসদাচরণ’ ছিল না, বরং তা ছিল নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ভেতরকার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতিরই একটি ‘পদ্ধতিগত সমস্যা’।
কমিশনের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত গুম নিয়ে ১ হাজার ৮০০-এর বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগ বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, অপরাধ সংঘটনের পর অনেকক্ষেত্রে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা নিজেদের দায় এড়াতে অর্থ দান বা অন্য কোনো প্রতীকী কার্যকলাপের আশ্রয় নিতেন।
বাসসের একটি প্রতিবেদনে উঠে আসে এমনই একটি ঘটনা, যেখানে এক র্যাব কর্মকর্তা দুজনকে হত্যার পর ‘অপারেশনের’ টাকা নিজের গ্রামের মসজিদে দান করেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কমিশনের সামনে এক জ্যেষ্ঠ জেনারেল স্বীকার করেন, তিনি চেষ্টা করতেন যাতে সেনাবাহিনী থেকে প্রেষণে আসা র্যাব কর্মকর্তারা গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে না পড়েন। এক ব্রিফিংয়ে, র্যাব থেকে ফিরে আসা এক জুনিয়র কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি স্বীকার করেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি দুজনকে হত্যা করেছেন এবং আরও চারজন হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যখন জিজ্ঞেস করেন, হত্যার পর ‘অপারেশন’-সংক্রান্ত অর্থ কীভাবে ব্যয় হয়েছে, তখন সেই জুনিয়র জানান, তিনি সেই টাকা গ্রামের মসজিদে দান করেছেন।
কমিশনের মতে, সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো— এমন স্বীকারোক্তির পরও সংশ্লিষ্ট জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কোনো তদন্ত শুরু করেননি, নিহতদের পরিচয় জানার চেষ্টা করেননি, এমনকি বিষয়টি সামরিক বা বেসামরিক বিচার ব্যবস্থায়ও তোলেননি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুমের ঘটনাগুলো ছিল সংঘবদ্ধ ও প্রাতিষ্ঠানিক, যেখানে বিভিন্ন ইউনিটের একাধিক সদস্য জড়িত ছিলেন। কমিশন সাতটি গোয়েন্দা সংস্থার নথি পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ‘প্রাথমিক সাক্ষ্যপ্রমাণ’ পাওয়ার কথাও উল্লেখ করেছে।
কমিশন আরও জানায়, তরুণ কর্মকর্তারা অনেক সময় এসব অপরাধ কার্যক্রম থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে চেষ্টা করলেও প্রাতিষ্ঠানিক চাপ এবং ভয়ের কারণে ‘অক্ষম ও অসহায়’ অনুভব করতেন।
গুম কমিশনের মতে, এই সাক্ষ্যগুলো শুধুমাত্র নিরাপত্তা বাহিনীর ভেতরে ভয়ভীতির সংস্কৃতিকে নয়, বরং ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার প্রতিফলনও ঘটায়।
