সারিয়াকান্দি উপজেলা

সারিয়াকান্দিতে অবৈধ গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসা: শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নাভিশ্বাস

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় লাইব্রেরিগুলোতে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই। অভিযোগ উঠেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও উপজেলার প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের গাইড বই কিনতে নির্দেশ দিচ্ছেন। এর ফলে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে উচ্চমূল্যে এসব বই কিনছে, যা তাদের সৃজনশীলতা নষ্ট করছে এবং অভিভাবকদের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে।

আইন অনুযায়ী, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নোট-গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশনা, আমদানি, বিতরণ ও বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই বিধান লঙ্ঘনকারীর জন্য সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু সারিয়াকান্দিতে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট আইন ও নিয়ম অগ্রাহ্য করে প্রকাশ্যেই এই অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এবং হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার সারিয়াকান্দি পৌরসভা, জোড়গাছা, রামচন্দ্রপুর, ছাইহাটা, ফুলবাড়ি, কুতুবপুর এবং কড়িতলা বাজারে লাইব্রেরিগুলোতে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের রমরমা বাণিজ্য চলছে। জানা গেছে, গাইড কোম্পানিগুলো মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে কিছু অসাধু শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাকে তাদের দলে ভিড়িয়েছে।

জোড়গাছা গ্রামের ভ্যানচালক হামিদুল ইসলাম জানান, সংসার চালাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ ও উচ্চমূল্যের গাইড বই কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। শিক্ষকরা নির্দিষ্ট কোম্পানির গাইড বই কেনার নির্দেশনা দেওয়ায় বাধ্য হয়ে তাদের এই বই কিনতে হচ্ছে।
পৌরসভা এলাকার একজন অভিভাবক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) অভিযোগ করেন, তার ছোট মেয়ের জন্য ১২শ টাকা দিয়ে গাইড বই কিনেছেন এবং বড় মেয়ের (নবম শ্রেণি) বই কিনতে প্রায় ৫ হাজার টাকা লাগবে, যা তিনি এখনও কিনতে পারেননি। তিনি জানান, কিছু শিক্ষক বই বিক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তি করে গাইড কেনার পরামর্শ দেন এবং বিনিময়ে কমিশন নেন, যার ফলে বিক্রেতারাও বেশি দামে বই বিক্রি করেন।
উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থী জানিয়েছে, শিক্ষকরা নির্ধারিত প্রকাশনীর নোট বা গাইড বই কিনতে নির্দেশ দেন এবং শিক্ষকদের কথামতো গাইড না কিনলে তারা রাগ করেন।

একটি প্রকাশনীর মার্কেটিং নিয়োগপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাদের কাজ হলো শিক্ষকদের সৌজন্য কপি গাইড ও বিভিন্ন ধরনের উপহার দেওয়া। এছাড়াও নগদ অর্থ দিয়ে বিদ্যালয়ের সাথে চুক্তি করা হয়। যে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা যত বেশি, সেই বিদ্যালয়ের জন্য তত বেশি টাকা দেওয়া হয়।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি রমজান আলী জানান, তিনি শিক্ষক ও শিক্ষক নেতা হিসেবে নিয়মিত সভায় শিক্ষকদের গাইড বই কিনতে নিরুৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, বই কোম্পানির লোকজন শিক্ষকদের রাইস কুকার, প্রেসার কুকার, প্লেট, গ্লাস ইত্যাদি উপহার দিয়ে থাকে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাকী মো. জাকিউল আলম ডুয়েল বলেন, অনেক শিক্ষক বিভিন্ন জায়গায় প্রাইভেট পড়ানোর সময় এসব বেশি করে থাকেন। তিনি শিক্ষকদের এসব করতে নিষেধ করলেও কোনো লাভ হয় না।

এ বিষয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (অতিরিক্ত) মো. তারিকুল আলম জানান, তিনি খোঁজ খবর নিয়ে সঠিক তথ্য পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

একই কথা বলেছেন সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান। তিনি জানান, এ বিষয়ে তার জানা ছিল না এবং খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button