
নিজস্ব প্রতিবেদক: গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর ডান তীরে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এই ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের গোদাখালি এলাকায় এই ভাঙন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, গত সাত দিনে প্রায় ৩০০ বিঘা আবাদি জমি, বসতভিটা এবং নদী তীর সংরক্ষণ কাজের স্পার যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙনের বিষয়টি স্বীকার করে বগুড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে যমুনার ডান তীরের কিছু অংশ এখনো ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। সেই এলাকাগুলোই নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, গত সাত দিন ধরে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ ১ জুলাই সারিয়াকান্দির মথুরাপাড়া স্টেশনে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১০১ সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন।
সারিয়াকান্দির যমুনার ডান তীরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে কামালপুর ইউনিয়নের গোদাখালি এলাকায় নিয়মিত ভাঙন হচ্ছে। ইউনিয়নের নদী তীর থেকে বেড়ি বাঁধ ৫০০ মিটার দূরে। অনেক স্থানে এই দূরত্ব আরও কম।
গেল দু বছরে এই ইউনিয়নে আবাদি জমিসহ কয়েকশো বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়। এতে অনেকেই গৃহহীণ হয়েছিলেন।
সেই সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা এই পয়েন্টগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে জানিয়েছিলেন। কিন্তু নদীর ডান তীর রক্ষায় জিও ব্যাগ ছাড়া এখনও নতুন কোনো পরিকল্পনা নেয়া হয়নি।
এবার বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই যমুনার ডান তীরের আবাদি জমি ভাঙতে শুরু করেছে। পাশাপাশি ইছামারা, হাওড়াখালী, দড়িপাড়ায় ভাঙন ধরেছে।
এতে গত সাত দিনে কামালপুর ইউনিয়নে প্রায় ৩০০ বিঘা আবাদি জমি নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। এসব জমিতে আউশ ধান, পাট, কাউন, চিনা বাদাম, বেগুন ও ভুট্টার মতো ফসল ছিল।
এবারের নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কামালপুর গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন (৩৮)। জানালেন, এবারের ভাঙ্গনে তার প্রায় দেড় বিঘা জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। এই জমিতে ভুট্টা, বেগুন লাগানো ছিল। আমাদের গ্রামের অন্তত ১২ জনের জমি ভাঙনের শিকার হয়েছে।
গোদাখালী গ্রামের কবির হোসেন (৩৫) বলেন, এই ভাঙনে আমাদের সর্বনাশ হয়েছে। ফসল করার মতো জমি আর থাকল না। গতবারের ভাঙনে অধিকাংশই তাদের বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছে। তাই এবারের ভাঙনে ফসলী জমিই গেল।
একই গ্রামের মিলন (৪০) বলেন, চোখের সামনে এভাবে জমি-জমা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় আমরা এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছি। কীভাবে সংসার চালাব, তা ভেবে কুল-কিনারা পাচ্ছি না।
বগুড়ার পাউবো বলছে, যমুনা নদীর বগুড়া অংশের ৪০ কিলোমিটারের অধিকাংশ স্থান এখন ভাঙনের ঝুঁকিমুক্ত। তবে যমুনার ডান তীরের ডাউন অংশে সারিয়াকান্দির গোদাখালী, ইছামারা থেকে শুরু করে ধুনট উপজেলার শহড়াবাড়ি, বানিয়াজান, ভান্ডারবাড়ীএলাকাগুলো নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব এলাকায় নদী রক্ষায় মরফিওলজিক্যাল সার্ভের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সার্ভে রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তাবনা দেওয়া হবে।
সারিয়াকান্দিস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) হুমায়ুন কবির বলেন, ৩০০ মিটার এলাকা নদীতে ধ্বসে গেছে। সেখানে আমাদের প্রধান প্রকৌশলী গত সোমবার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এই এলাকাগুলো ভাঙনের কারণ অনুসন্ধানে সার্ভে কাজ শুরু করে দিয়েছি আমরা। রিপোর্ট পেলে নদীর তীর রক্ষায় প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।
হুমায়ুন কবির জানান, আর বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন সেখানে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ করা হবে। আগামীতে ভাঙন প্রতিরোধের জন্য সিসি ব্লক দিয়ে ভাঙন কবলিত এলাকায় কাজ করার আশা করছি।