বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

জোড়ে ঘুরছে পৃথিবী, ৯ জুলাই ছিল ইতিহাসে তৃতীয় দ্রুততম দিন

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি ও বন্যার মধ্যে দিয়ে চললেও, গত ৯ জুলাই পৃথিবীর ইতিহাসে স্মরণকালের তৃতীয় দ্রুততম দিন অতিক্রম করেছে মানুষ—যা অনেকেই টেরই পাননি। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের মানুষের পক্ষেই এই পরিবর্তন বোঝা ছিল দুষ্কর। তবে বিজ্ঞান বলছে, ৯ জুলাই দিনটি চিরস্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়।

বিজ্ঞানীরা জানান, পৃথিবী সাধারণত নিজ অক্ষে একবার ঘুরতে সময় নেয় ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড। কিন্তু ২০২৫ সালের ৯ জুলাই এই সময়ের চেয়ে ১.৩ মিলিসেকেন্ড কম সময় নিয়েছে। এটি ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে তৃতীয় সবচেয়ে ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যের দিন।

এর আগে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম দিন ছিল ২০২৪ সালের ৫ জুলাই, যার দৈর্ঘ্য ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ১.৬৬ মিলিসেকেন্ড কম। দ্বিতীয় দ্রুততম দিন ছিল ২০২৩ সালের ১৬ জুলাই, ১.৩১ মিলিসেকেন্ড কম দৈর্ঘ্যে।

এই হিসাব পরিচালনা করে ইন্টারন্যাশনাল আর্থ রোটেশন অ্যান্ড রেফারেন্স সিস্টেম সার্ভিস (IERS)। সংস্থাটি জানায়, গ্রীষ্মকালে দিনের দৈর্ঘ্য স্বাভাবিকভাবেই বেশি হয়ে থাকে, তবে ৯ জুলাই ছিল ব্যতিক্রম। গবেষণা বলছে, আসন্ন ২২ জুলাই ও ৫ আগস্ট দিন দুটি হয়তো আরও দ্রুততম হবে। ওই দিনগুলোতে চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরে থাকবে, ফলে তার মহাকর্ষ কম প্রভাব ফেলবে এবং পৃথিবীর ঘূর্ণন কিছুটা বাড়বে।

বিজ্ঞানীরা জানান, দিনের দৈর্ঘ্য এত সামান্য কম হওয়ায় (মাথামুণ্ডু ১ মিলিসেকেন্ড), তা মানুষের চোখে বা অনুভবে ধরা পড়ে না। গড়ভাবে মানুষের চোখের পলক ফেলতেই যেখানে ১০০ মিলিসেকেন্ড লাগে, সেখানে এই পার্থক্য খুবই ক্ষুদ্র।

তবে বিজ্ঞানীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, গত কয়েক বছরে পৃথিবীর ঘূর্ণন অপ্রত্যাশিতভাবে দ্রুত হয়ে উঠেছে। ২০২০ ও ২০২২ সালে পারমাণবিক ঘড়ির মাধ্যমে তা শনাক্ত করা হয়। এই পরিবর্তনের পেছনে ভূমিকা রাখছে বায়ুমণ্ডল ও পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের পরিবর্তন।

বিজ্ঞান বলছে, যদিও আমরা সময়কে নির্দিষ্ট মনে করি, পৃথিবীর ঘূর্ণন ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে। গড়ে প্রতি শতাব্দীতে পৃথিবীর ঘূর্ণন ২ মিলিসেকেন্ড ধীর হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রায় ২৫ কোটি বছর আগে ডাইনোসরের যুগে এক দিন ছিল ২৩ ঘণ্টা। আবার অনুমান করা হচ্ছে, এখন থেকে ২০ কোটি বছর পর একদিন হবে ২৫ ঘণ্টার।

এই পরিবর্তনের প্রধান কারণ হলো ‘টাইডাল ব্রেকিং’—অর্থাৎ চাঁদের মহাকর্ষজ টান। যখন চাঁদ পৃথিবীর কাছাকাছি আসে, তখন সাগরের পানির জোয়ার পৃথিবীর ঘূর্ণনকে ধীর করে। আর চাঁদ দূরে গেলে সেই টান কম হয় এবং পৃথিবী কিছুটা দ্রুত ঘোরে।

তথ্যসূত্র: মেইল অনলাইন

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button