জাতীয়
প্রধান খবর

“যেখানেই পাবে সেখানেই গুলি করবে” শেখ হাসিনার অডিও ফাঁস

আল জাজিরার প্রতিবেদন

গত বছরের ছাত্র আন্দোলন দমনে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ’ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দিয়েছিলেন— এমন দাবির পক্ষে একটি অডিও রেকর্ডিং সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির যাচাইয়ের পর এবার বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে ‘যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখানেই গুলি চালাতে’ নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং এটি ছিল একটি ‘খোলা আদেশ’। প্রতিবেদনে তার গোপন ফোনালাপ প্রকাশ করা হয়, যেখানে এসব নির্দেশনার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট (আই-ইউনিট)।

আই-ইউনিট বলছে, অডিওগুলোতে কোনো এআই কারসাজি ছিল কি না তা ফরেনসিকভাবে যাচাই করা হয়েছে এবং ভয়েস-ম্যাচিং প্রযুক্তির মাধ্যমে কলকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে।

একটি রেকর্ডিংয়ে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “আমার নির্দেশ ইতোমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। আমি সম্পূর্ণ উন্মুক্ত নির্দেশ জারি করেছি। এখন তারা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে, যেখানেই পাবে সেখানেই গুলি করবে।”

১৮ জুলাইয়ের একটি কল রেকর্ডে শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো নিয়েও আলোচনা করতে শোনা যায় হাসিনাকে। তিনি বলেন, “যেখানেই তারা কোনো সমাবেশ দেখতে পায়… এখন এটি উপর থেকে করা হচ্ছে— ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জায়গায় শুরু হয়েছে।”

এই নির্দেশনার ফলে দেশে কয়েক সপ্তাহ ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন এবং আহত হন আরও ২০,০০০ জন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শাবির শরীফ জানিয়েছেন, একটি হেলিকপ্টার থেকে তাদের হাসপাতালের প্রবেশপথ লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। “গুলি কাঁধে ও বুকে ঢুকেছে এবং শরীরের ভেতরে রয়ে গেছে। এক্স-রেতে বিশাল গুলি দেখা গেছে,” বলেন তিনি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতে, এসব তথ্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। তার মন্ত্রী ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারাও এই মামলার আসামি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হাসিনার অধীনস্থ ‘এনটিএমসি’ নামক নজরদারি সংস্থাই এসব কথোপকথন রেকর্ড করেছিল। অতীতে রাজনৈতিক নেতাদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ছিল সংস্থাটির বিরুদ্ধে।

প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “তিনি (হাসিনা) অন্যদের জন্য অনেক গভীর খাদ খনন করেছিলেন। এখন তিনি নিজেই সেই খাদে পড়েছেন।”

২০২৪ সালের জুনে হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে কোটা পুনর্বহাল হলে আন্দোলন শুরু হয়। এরপর ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যুর পর তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

সালমান এফ রহমান ও পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কথোপকথনে উঠে আসে, আবু সাঈদের মৃত্যুর ময়নাতদন্তে গুলির বিষয়টি বাদ দিতে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম বলেন, “তারা দাবি করেছিল, সাঈদ ভাই পাথর ছোড়ার আঘাতে মারা গেছেন, যদিও তিনি স্পষ্টভাবে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।”

নিহত সাঈদের বোন সুমি খাতুন এক বৈঠকে বলেন, “ভিডিওতে দেখানো হয়েছে, পুলিশ তাকে গুলি করেছে। এখানে তদন্তের কী আছে? এখানে আসাটাই ভুল ছিল।”

আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র আল জাজিরাকে জানান, শেখ হাসিনা কখনো ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ শব্দ ব্যবহার করেননি এবং রেকর্ডিংগুলো ‘সাজানো বা জাল’ হতে পারে বলে দাবি করেন।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button