বগুড়া জেলা
প্রধান খবর

মশায় অতিষ্ঠ জীবন, অথচ মশক নিধনে বরাদ্দ লাখ লাখ টাকা

বগুড়া পৌরসভা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি তিন দিন জ্বরে ভুগে সুস্থ হয়েছেন বগুড়া পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফুলদিঘীর বাসিন্দা তৌফিকুল ইসলাম। এখনও শারীরিক দুর্বলতা আছে তার। জানালেন, এলাকায় ২৪ ঘণ্টার মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ জনজীবন।


এমন অবস্থা বগুড়া পৌরসভার অধিকাংশ এলাকার। যদিও প্রতিবছর মশক নিধনে বড় অংকের বরাদ্দ থাকে দেশের বৃহৎ এ পৌরসভায়। কিন্তু কার্যত কোনো উপকার পান না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। সম্প্রতি রাজধানীতে ডেঙ্গু প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বগুড়াবাসীর মাঝে এ নিয়ে নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। চলতি বছরে বগুড়ায় অন্তত ৭৫ জন মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।


পেশায় ব্যবসায়ী তৌফিকুল ইসলাম জানান, বাড়ির সামনে দিয়ে একটি বড় প্রাকৃতিক নালা আছে। এখানে সবাই ময়লা ফেলে, পানি জমে থাকে। এটা কখনই পরিস্কার করতে দেখিনি। এ ছাড়া বাসাবাড়ির ড্রেনগুলোও পরিস্কার করে না পৌরসভার লোকজন। ফলে আমাদের এলাকায় মশাও প্রচুর। দিনে বা রাতে সব সময় মশার উৎপাত থাকে।


স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, বগুড়ায় বসবাসকারী বাসিন্দারাই এখন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে নিয়মিত জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করলে মশাবাহী এসব রোগ-বালাই থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তবে নাগরিকদের অভিযোগের বিপরীতে পৌরসভা কর্তৃপক্ষদের দাবি, তারা নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।


প্রায় দেড় শ বছরের পুরোনো বগুড়া পৌরসভায় ওয়ার্ড ছিল ১২টি। ২০০৬ সালে প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তন বাড়িয়ে একে ২১ ওয়ার্ডে উন্নীত করা হয়। ১৩ থেকে ২১ নম্বর ওয়ার্ডগুলোকে বর্ধিত অংশ বলা হয়।


বগুড়া পৌরসভা সূত্র জানায়, বছরে এই পৌরসভায় ১৫০ লিটার মশার ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ২১টি ওয়ার্ডে এসব ওষুধ ছিটাতে ফগার মেশিন আছে ২৪টি। মশক নিধন কার্যক্রমের সময় প্রতি ওয়ার্ডে ২ লিটার করে ওষুধ বরাদ্দ দেয়া হয়। ওষুধ প্রয়োগের জন্য ওয়ার্ডপ্রতি বরাদ্দ দেয়া হয় ২০০ লিটার ডিজেল ও ২৫ লিটার অকটেন। আর মশক নিধনের কাজে ওয়ার্ড প্রতি তিনজন কর্মচারী দায়িত্বে থাকেন। সম্প্রতি আনুষঙ্গিক এসব পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে পৌরসভা।


কিন্তু বগুড়া পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছাড়া অধিকাংশ এলাকায় মশার ওষুধ প্রয়োগ দেখতে পান না তারা। অনেক এলাকায় বছরে মাত্র একবার বা দু বার ওষুধ প্রয়োগ করা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।


আবার প্রায় ওয়ার্ডের অনেক ড্রেন নিয়মিত পরিস্কার করা হয় না। এতে করে ড্রেনের ময়লা পানি জলাবদ্ধ হয়ে মশা-মাছির আবাসস্থল হিসেবে গড়ে উঠেছে। শহরের ঠনঠনিয়া এলাকার এসেনশিয়াল ড্রাগস প্রতিষ্ঠানের সামনে প্রতিদিন ময়লার স্তুপ হয়ে থাকে। এখানকার একমাত্র ড্রেনে মাসের পর মাস পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। এমনকি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে বর্জ্য জমে থাকতে দেখা যায়। সেখানেও প্রয়োজনের তুলনায় কম মশার ওষুধ ছিটানোর কথা জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।


শহরের বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোয় বর্জ অপসারণ কিংবা মশক নিধনের অবস্থা বেশি শোচনীয় বলে দাবি স্থানীয়দের।


মশার অত্যাচারের কথা বলে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের শাকপালা এলাকার বাসিন্দা ও বেসরকারি চাকরিজীবী সাজ্জাদ হোসেন জানান, বছরে একবার করে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখি। এবার এখনও চোখে পড়েনি। দিন যাচ্ছে মশা-মাছির যন্ত্রনা আরও বাড়ছে।


১২ নম্বর ওয়ার্ডের ঠনঠনিয়া এলাকার বাসিন্দা আরিফ হাসান বলেন, এই এলাকায় সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল ও একাধিক বেসরকারি ক্লিনিক আছে। এখানে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের আরও বেশি নজরদারি দরকার। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের এলাকায় সারা দিনরাত রাস্তার ওপর ময়লা পড়ে থাকে। ড্রেনের পানি জমে থাকে। এগুলো কেউ দেখার নেই।


বগুড়া পৌরসভার চলতি অর্থ বছরের বাজেটের নথি ঘেটে দেখা যায়, এবার মশক নিধন ওষুধ ক্রয়ে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। গত অর্থ বছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার আগে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ওষুধ ক্রয়ের ব্যয় দেখানো হয় ২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।


চলতি অর্থ বছরে মশক নিধন কাজে জ্বালানী ক্রয়, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে লিফলেট-মাইকিং-পত্রিকায় প্রচারণা, ব্লিচিং পাউডার ক্রয়ে আরও ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ ধরেছে বগুড়া পৌরসভা।


প্রতিবছর তারা ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নেন। এবারও সেই কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানান পৌরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শক শাহ আলী খান।


জানালেন, ডেঙ্গু রোগে প্রতিরোধ কর্মসূচি হিসেবে চলতি মাসে চারদিন শহরের সব এলাকায় মাইকিং করা হয়। ২০ হাজার লিফলেট ছাপানো হয়েছে, সেগুলো বিলিও করা হচ্ছে।


মশা নিধনে নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর কথা দাবি করে স্বাস্থ্য পরিদর্শক শাহ আলী খান বলেন, এ ছাড়া এবার প্রতি ওয়ার্ডে ২ লিটার করে মশা নিধনের ওষুধ দেয়া হয়েছে। এগুলো হ্যান্ড স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে দেন কর্মীরা। পাশাপাশি ১০ কেজি ব্লিচিং পাউডার, ৫ কেজি ডিটারজেন্ট পাউডার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রতি ওয়ার্ডে। ডেঙ্গুসহ মশাবাহী রোগ নির্মূলে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে পৌরসভা।


জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে বগুড়ায় অন্তত ৭৫ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন। তবে মারা যাওয়ার কোনো রেকর্ড নেই জেলায়। এই জুলাই মাসে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ৬ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। এখনও দুই জন চিকিৎসাধীন আছেন।


শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, চিকিৎসা নেয়া ডেঙ্গু রোগীদের হিস্টোরি যাচাই করে দেখা যাচ্ছে বগুড়া থেকেই তারা আক্রান্ত হয়েছেন। আবার বাইরের জেলায় ট্রাভেলিং করার মাধ্যমে আক্রান্ত হচ্ছেন।


তবে সাধারণ জ্বর হোক কিংবা ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহী জ্বরে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করতে নিষেধ করেন আব্দুল ওয়াদুদ। এতে অসুখের সঠিক কারণ জানা বা চিকিৎসায় জটিলতা বাড়ে বলে জানান তিনি।

করণীয় প্রসঙ্গে ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ব্যক্তি সচেতনতাটা এ ধরনের রোগ থেকে রক্ষা পেতে বেশি সহায়তা করবে। ড্রেন বা বাসাবাড়িতে জমে থাকা পানি এডিস মশার প্রজননস্থল। এই জায়গাগুলো পরিষ্কার-পর

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button