ঢাকায় একাধিক ভাড়া বাসা গ্রামে থাকার ঘর না থাকা সেই রিয়াদের

একসময় গ্রামে ভালো ঘরের অভাবে কষ্টে দিন কাটানো আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান রিয়াদ ঢাকায় এসে চাঁদাবাজির মাধ্যমে দ্রুত বদলে ফেলেছেন নিজের জীবনযাপন। রাজধানীতে রয়েছে তার ভাড়া করা একাধিক বাসা। আওয়ামী লীগের সাবেক নারী সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর রিমান্ডে দেওয়া তথ্যে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
গুলশান থানা-পুলিশ জানায়, রিয়াদের দেওয়া তথ্যে গতকাল (বুধবার) ভোরে বাড্ডার একটি মেস বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি ছোট ওয়ার্ডরোব থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। ওই বাসায় একাই থাকতেন রিয়াদ। এছাড়া, তার আরেকটি বাসা রয়েছে পশ্চিম রাজাবাজারে।
রিমান্ডে রিয়াদ স্বীকার করেছেন, তিনি এবং তার সহযোগীরা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রভাবশালী নেতা ও সংসদ সদস্যদের টার্গেট করে চাঁদা আদায় করতেন। তার নিজস্ব সোর্স বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তারা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদা চাইত, না দিলে ‘মব’ তৈরি করে হুমকি দিত।
২৬ জুলাই সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে রিয়াদসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার হন। এই মামলায় আরও ছয়জন সক্রিয় নেতার নাম উল্লেখ করে এবং ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে গুলশান থানায় মামলা করেন শাম্মীর স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর। আটক অন্য আসামিরা হলেন—গৌরব জামান ওরফে অপু, ইব্রাহিম হোসেন ওরফে মুন্না, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও এক কিশোর।
পুলিশ বলছে, এই চক্র রাজধানীতে বিভক্ত হয়ে চাঁদাবাজি ও তদবির বাণিজ্য চালাত, যার নিয়ন্ত্রণে ছিলেন রিয়াদ ও অপু। তারা থানাগুলোতে সাংগঠনিক পরিচয় ব্যবহার করে প্রভাব খাটিয়ে চাঁদা আদায় করত।
এক ঘটনায়, কলাবাগানের গ্রিন রোডে সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে তাকে ভয় দেখিয়ে পাঁচ কোটি টাকার চেক লিখিয়ে নেয় চক্রটি। অভিযোগে উঠে এসেছে, আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের জমির দালাল মুক্তার নামে এক ব্যক্তি এই চক্রকে তথ্য সরবরাহ করতেন। ওই ঘটনায় উদ্ধার হওয়া চারটি চেকে মোট ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা উল্লেখ ছিল।
আজাদের প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম জানান, ঘটনার দিন রিয়াদের নেতৃত্বে ছয়জন অফিসে ঢুকে ফোন জব্দ করে টাকা দাবি করে। টাকা না পেয়ে তারা টেবিল থেকে চেক বই বের করে জোর করে চেক লিখিয়ে নেয়।
এই ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। সাইফুল বলেন, রিমান্ড শেষে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, রিমান্ডে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। রিয়াদ মাঠপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করলেও কেউ পেছন থেকে নিয়ন্ত্রণ করলে তদন্তে তারও নাম সামনে আনা হবে। পলাতক অপু এবং অন্যান্য সহযোগীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তথ্য সূত্র: বাংলাদেশ টাইমস