
আগামীকাল ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় এই সরকার। এক বছরের মাথায় সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে চলছে আলোচনা। এমন সময় বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সরকারের ১২টি প্রধান সাফল্য তুলে ধরেছেন।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টে তিনি এসব অর্জনের বিস্তারিত তুলে ধরেন। নিচে তার উল্লেখিত ১২টি সাফল্যের সারাংশ তুলে ধরা হলো—
সরকারের ১২টি প্রধান অর্জন:
১. শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা:
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরে আসে। প্রতিশোধ ও বিশৃঙ্খলার বদলে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে পুনর্মিলন ও গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হয় দেশ।
২. অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার:
খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪% থেকে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে, সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। রেমিট্যান্স ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, রপ্তানি ৯% বৃদ্ধি পায়, ব্যাংক খাত স্থিতিশীল হয় এবং টাকার মান ডলারের তুলনায় শক্তিশালী হয়।
৩. বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে অগ্রগতি:
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় অগ্রগতি, হান্ডা গ্রুপের ২৫ কোটি ডলারের বিনিয়োগে ২৫,০০০ কর্মসংস্থানের আশা, দ্বিগুণ এফডিআই নিশ্চিত, চীনের বিনিয়োগে আগ্রহ বৃদ্ধি।
৪. গণতান্ত্রিক সংস্কার ও ‘জুলাই সনদ’:
৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐক্য, সংস্কার কমিশন গঠন এবং ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত। এটি ভবিষ্যতে স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধে কাঠামোগত জবাবদিহি নিশ্চিত করবে।
৫. জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার:
জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধে চারটি বড় মামলার বিচার শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনার বিচার চলছে।
৬. নির্বাচনী প্রস্তুতি ও সংস্কার:
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের দিন নির্ধারিত। প্রবাসী, তরুণ ও নারী ভোটার অন্তর্ভুক্তি, ডিজিটাল মতামত প্ল্যাটফর্ম চালু, এবং নিরাপত্তায় ৮ লাখ নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েনের পরিকল্পনা।
৭. প্রতিষ্ঠান ও আইন সংস্কার:
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, পুলিশের মানবাধিকার সেল, বডিক্যাম, আধুনিক জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ, গ্রেপ্তারের পর ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারকে জানানো বাধ্যতামূলকসহ আইনে ব্যাপক সংস্কার।
৮. গণমাধ্যম স্বাধীনতা ও ডিজিটাল অধিকার:
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, সমালোচনার স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং প্রথমবার ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি।
৯. নতুন পররাষ্ট্রনীতি:
একক নির্ভরশীলতা পরিহার করে ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও চিকিৎসা সহায়তা জোরদার, সার্ক পুনর্জাগরণ এবং আসিয়ানে সদস্যপদ অর্জনের পদক্ষেপ।
১০. প্রবাসী ও শ্রমিক অধিকার:
আমিরাত ও মালয়েশিয়ায় ভিসা চালু, অবৈধ শ্রমিক বৈধকরণ, জাপানে ১ লাখ তরুণ পাঠানো, এবং ইতালি, কোরিয়া ও সার্বিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর পরিকল্পনা।
১১. বিপ্লবীদের সহায়তা:
৭৭৫ শহীদ পরিবারের মাঝে ১০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ও ভাতা, ১৩,৮০০ আহতকে ১৫৩ কোটি টাকা সহায়তা, গুরুতর আহতদের বিদেশে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।
১২. সমুদ্র ও অবকাঠামো উন্নয়ন:
বঙ্গোপসাগরকে ‘জলভিত্তিক অর্থনীতির’ কেন্দ্র ঘোষণা, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি, উপকূল উন্নয়ন প্রকল্প সম্প্রসারণ এবং গভীর সমুদ্রে মৎস্য ও শিল্প প্রকল্পে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বে অগ্রগতি।
এই এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকার দেশে শান্তি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করতে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা আগামী দিনের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে—এমনটাই মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।