বগুড়া জেলা

বগুড়ার লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে কাজ করছে লাখো মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়ার লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের পণ্য ও সেবা বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে জেলার উদ্যোক্তারা তৈরি করেছেন অনলাইন প্লাটফরম। আরও আছে ই ডিরেক্টরি, যাতে অন্তত ৩০০ জন উদ্যোক্তা রয়েছেন। এর মাধ্যমে বগুড়ার লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পন্য শুধু দেশ নয়, বিদেশের বাজারে ব্যাপকহারে ছড়িয়েছে। এতে এই খাতে বগুড়ার অন্তত এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

‘স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের সম্ভাবনায় বগুড়া পৌরসভার ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে উদ্যোক্তাদের আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। সোমবার (২৫ আগস্ট) সকাল ১০ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

সুইজারল্যান্ড ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত ‘প্রবৃদ্ধি’ প্রকল্প এবং বগুড়া পৌরসভার সহায়তায় বগুড়া লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাত থেকে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে উদ্যোক্তারা আলোচনা করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা শাজাহান আলম প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেন।

তিনি জানান, ২০২২ সালের এপ্রিলে বগুড়া পৌরসভার সঙ্গে ‘প্রবৃদ্ধি’ প্রকল্পের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে একটি ই-মার্কেটপ্লেস তৈরি এবং ২৫০টি কারখানার ই-মার্কেটিং দক্ষতা বৃদ্ধি। ২০২৫ সালের মার্চে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ই-ডিরেক্টরি তৈরি। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে বগুড়া পৌরসভায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু। এ ছাড়া কালিতলা বাজারে শেড তৈরি করা হয়।

নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বগুড়া পৌসভায় আগে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করতো ৭ হাজারের মত ব্যক্তি এখন এই সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ১৭ হাজারের মত। এ থেকে পৌরসভার আয় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পৌর সভার হোল্ডিং ট্যাক্স পুণঃএ্যাসেসমেন্ট করার কারণে আয় বেড়ে গেছে।

আলোচনা সভায় উদ্যোক্তারা জানান, বগুড়ার ৮শ এর বেশি ছোট বড় কারখানা রয়েছে। এই কারখানাগুলোতে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

২০৩০ সালের মধ্যে কৃষি সন্ত্রপাতি উৎপাদন বাড়াতে হবে। এতে আমদানি ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা যাবে। চায়নার পন্য আমদানি না করে চায়নার মত কারিগরি সহায়তা নিয়ে দেশের কম দামে পন্য উৎপাদনের দিকে ঝুঁকতে হবে জানান উদ্যোক্তারা।

সেমিনারে বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল মেশিনারী মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বামমা) সাধারণ সম্পাদক রাজেদুর রহমান রাজু বগুড়ার লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বাজার বৃদ্ধির জন্য অনলাইন প্লাটফরম করেছি আমরা। এ ছাড়া ই ডিরেক্টরি করা হয়েছে। এতে অন্তত ৩০০ জন উদ্যোক্তা রয়েছেন। এর ফলে ভারত, নেপালে আমাদের পন্য বিক্রি বেড়েছে, যার মধ্যে সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প বেশি।

লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আমাদের সম্ভাবনা অনেক বেশি। কিন্তু আমাদের জায়গা সংকট আছে। আমাদের বিসিকে জায়গা পাওয়া খুব কষ্টকর। এসবে নজর দিতে হবে।
বামমা’র সভাপতি আব্দুল মালেকও একই বিষয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, আমরা চট্টগ্রামের শিপিং ব্যবসায়ীদের সাথে আমরা ভারতে গিয়েছিলাম। সেখানকার পন্যের মান আমরা দেখেছি। আমাদের থেকে অনেক ভালো। আমরা প্রযুক্তির কারণে শুধু পিছিয়ে আছি। আমাদের যদি আর্থিক সহযোগীতা দেয়া হয়, তাহলে আমরাও বিশ্বমানের পন্য তৈরি করতে পারবো।
এই বামমা নেতা বলেন, আমাদের ২ থেকে ৪ শতাংশ সহজ সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের ব্যবস্থা করা উচিত।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কতৃপক্ষের মহা পরিচালক জীবন কৃষ্ণ সাহা রায় বলেন, বর্তমানে প্রতিযোগিতার যুগ চলছে। বাজারে প্রতিযোগিতা চলছে। প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে ভালো পন্য মার্কেটিং করতে হবে। চায়নার জনগন চাকরি খোঁজেন না তারা উদ্যোক্তা হয়। উন্নত বিশ্বের সাথে টিকে থাকতে হলে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। সুইস কন্ট্যাক্টের মাধ্যমে অনেক কাজ হয়েছে পৌরসভায় তা জনগনের জীবন মান উন্নয়নে কাজে লাগবে।

বগুড়া পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক মো. মাসুম আলী বেগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বগুড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, বিসিক বগুড়ার ডিজিএম মো.মাহফুজুর রহমান, সুইসকন্ট্যাক্টের সিনিয়র এ্যাডভাইজার (প্রবৃদ্ধি) রোকন উদ্দিন আহমেদ, উদ্যোক্তা তহমিনা পারভিন শ্যামলী প্রমুখ।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button