প্রয়োজনীয় তথ্য

বাংলাদেশে ট্রেনে কাটা পড়ে কেন এত মানুষ মারা যায়?

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে রেল দুর্ঘটনা, বিশেষ করে ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা প্রায় নিয়মিত ঘটছে। সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায় রেললাইনে কাটা পড়ে তরুণ-যুবক থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। এই ধরনের মৃত্যু শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং এটি সামাজিক অবহেলা, অবকাঠামোগত ঘাটতি এবং সচেতনতার অভাবের একটি চিত্র।

১. রেললাইনের পাশে বসবাস

বাংলাদেশে অনেক জায়গায় রেললাইনের পাশ ঘেঁষে মানুষ বসবাস করে। রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলিতে বস্তি, দোকানপাট, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত রেললাইনের পাশে গড়ে উঠেছে। ফলে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বাধ্য হয়ে রেললাইন দিয়ে হাঁটে। অসাবধানতার কারণে বা হঠাৎ ট্রেন চলে আসায় দুর্ঘটনা ঘটে।

২. ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাসের অভাব

স্টেশন বা ব্যস্ত এলাকায় ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাস খুবই কম। মানুষ দ্রুত রাস্তা পার হওয়ার জন্য রেললাইন দিয়েই দৌড়ে পার হয়। ট্রেনের গতি সঠিকভাবে আন্দাজ করতে না পারায় এ ধরনের দুর্ঘটনা বাড়ছে।

৩. অসতর্কতা ও অভ্যাসগত ভুল

অনেক মানুষ হেডফোন কানে দিয়ে বা মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রেললাইন দিয়ে হাঁটেন। ট্রেনের হুইসেল বা শব্দ শোনেন না, ফলে হঠাৎ ট্রেনের নিচে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

৪. পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকা

বাংলাদেশে অনেক লেভেল ক্রসিং রয়েছে যেখানে গেটম্যান নেই। গেট বন্ধ না থাকায় মানুষ ও যানবাহন নির্বিঘ্নে রেললাইন পার হয়। হঠাৎ ট্রেন চলে এলে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে।

৫. আত্মহত্যা

কিছু ক্ষেত্রে মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। সমাজে হতাশা, দারিদ্র্য, সম্পর্কজনিত টানাপোড়েন এসব কারণেও ট্রেনে কাটা পড়ার ঘটনা ঘটে।

৬. জনসংখ্যার চাপ ও আইন অমান্য

বাংলাদেশের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে রেললাইন প্রায়ই মানুষের চলাচলের রাস্তার অংশ হয়ে গেছে। আইন থাকলেও তা মানা হয় না। রেললাইনকে অনেকে ‘শর্টকাট’ পথ হিসেবে ব্যবহার করেন। ফলে দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।

সমাধানের উপায়

ব্যস্ত এলাকায় ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস তৈরি করা।

প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান নিশ্চিত করা।

রেললাইনের পাশে বসবাস ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা।

জনসচেতনতামূলক প্রচার বাড়ানো।

হেডফোন ও মোবাইল ব্যবহার করে রেললাইন পারাপার বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতা বৃদ্ধি।

ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু বাংলাদেশে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। এটি কেবল দুর্ঘটনা নয়, বরং অবহেলার একটি ধারাবাহিক চিত্র। যদি সরকার, রেল কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ মানুষ একসঙ্গে সচেতন হয় এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, তবে এ ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

এই বিভাগের অন্য খবর

এছাড়াও দেখুন
Close
Back to top button