অর্থ ও বানিজ্য

৫ ব্যাংক একীভূত করতে কত টাকা লাগবে

বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন সরকারি ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য ব্যয় হবে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের কাছ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা মূলধন হিসেবে নেওয়া হবে। বাকি অর্থ সংগ্রহ করা হবে আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিল ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে।

কোন কোন ব্যাংক একীভূত হচ্ছে
নতুন ব্যাংকে একীভূত হচ্ছে এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (এফএসআইবি), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক। তবে বিদেশি বিনিয়োগ থাকার কারণে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংককে এ তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে।

খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতির চিত্র
পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ৪৬ হাজার কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে আরও বেড়েছে। বর্তমানে এ ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭৭ শতাংশ। ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৯৮ শতাংশে পৌঁছেছে, ফার্স্ট সিকিউরিটির ৯৬ শতাংশ, গ্লোবালের ৯৫ শতাংশ, এসআইবিএলের ৬২ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের প্রায় অর্ধেক ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

অর্থায়নের উৎস

  • সরকারের বিনিয়োগ: ২০ হাজার কোটি টাকা
  • আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিল: ৮-১০ হাজার কোটি টাকা
  • আন্তর্জাতিক সহায়তা: বিশ্বব্যাংক ও এডিবি মিলে আড়াই বিলিয়ন ডলার সম্ভাব্য সহায়তা
  • জাতীয় বাজেট: চলতি বাজেটে রাখা ১৩ হাজার কোটি টাকা

নতুন ব্যাংকের কাঠামো
নতুন ব্যাংকটি সম্পূর্ণ নতুন নামে যাত্রা শুরু করবে। পাঁচ ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদ বাতিল করে সরকারের পক্ষে নতুন পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে এটি সরকারি মালিকানায় পরিচালিত হবে এবং পরে ধাপে ধাপে বেসরকারি খাতে বিক্রি করে দেওয়া হবে। ইসলামী ব্যাংকিংয়ে অভিজ্ঞ একজনকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।

সরকারের অর্থ ফেরত
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, সরকারের অর্থ সুদসহ ফেরত নেওয়া হবে। নতুন ব্যাংক ৩-৫ বছর সরকারি মালিকানায় চলবে এবং পরে বেসরকারি বা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হবে।

চ্যালেঞ্জ ও বিশেষ ছাড়
নতুন ব্যাংকের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে আমানতকারীদের আস্থা ফেরানো। এজন্য শুরুতে সিআরআর ও এসএলআরের নিয়ম থেকে ছাড় দেওয়া হবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই একীভূতকরণ নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে সফল করতে হলে দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ ও টেকসই ব্যবসায়িক পরিকল্পনা অপরিহার্য। অন্যথায় এটি সময়ক্ষেপণ ছাড়া আর কিছু নাও হতে পারে।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button