টিএমএসএসবগুড়ার ইতিহাস
টিএমএসএস এর ইতিহাস
ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) জাতীয় পর্যায়ের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)যা মূলত দারিদ্র্য বিমোচন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে। সাধারণ ভিক্ষুকদের এক ক্ষুদ্র সংগঠন থেকে কালক্রমে বাংলাদেশে দরিদ্র মহিলাদের অন্যতম বেসরকারি সংস্থায় পরিণত হয়েছে। বগুড়া জেলার ঠেঙ্গামারা গ্রামের ফাতেমা বেওয়া এবং জোমেলা বেওয়া নামক দুজন ভিক্ষুকের নেতৃত্বে একদল ভিক্ষুক ১৯৬৪ সালে ভিক্ষুকদের একটি মহিলা দল তৈরি করে। ফাতেমা বেওয়া ভিক্ষা করা ছাড়াও কাজ করতেন স্থানীয় সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ-এর বাসায়, তিনি তাকে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি আশপাশের এলাকার ভিক্ষুকদের সংগঠিত করেন এবং তারা সারাদিন বাড়ি বাড়ি ঘুরে সংগৃহীত ভিক্ষা থেকে এক মুঠো করে চাল জমা করা আরম্ভ করেন। ওই চাল থেকে বিক্রয়লব্ধ অর্থ তাদের সঞ্চয় তহবিলে জমা হতে থাকে। সঞ্চয় সংগ্রহের জন্য তারা ১০ এবং ২০ জনের একটি করে দল গঠন করেন। তাদের স্বামীরা বাড়ির বাইরে চলে গেলে তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করতেন। একসময় তাদের কার্যক্রমের খবর অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ৬টি গ্রামে এ ধরনের ১৪টি মহিলা দল গঠিত হয়।
প্রথমদিকে তারা কোনো একজন বিশ্বস্ত লোকের কাছে তাদের সংগ্রহ সঞ্চিত রাখতো। ক্রমান্বয়ে তাদের সঞ্চয় বাড়তে থাকে এবং তারা বগুড়া মহিলা কলেজের অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম-এর মতো একজন নেতা খুঁজে পান। তাঁর নেতৃত্বে এটি সাংগঠনিক রূপ নিতে থাকে এবং ১৯৮০ সালে এর নামকরণ করা হয় ‘ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ’। সংগঠনটি পরিচালনার জন্য ২১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। তখন এর সাধারণ সদস্য সংখ্যা ছিল ২২৬। তারা প্রায় ৮ টন চাল সংগ্রহ করেন। পর্যায়ক্রমে তারা নিজেদের দলকে দরিদ্র ও দুস্থ নারীদের কল্যাণে নিবেদিত সংগঠন হিসেবে নিবন্ধন করেন এবং অধ্যাপিকা হোশনে-আরা বেগমের নেতৃত্বে অতি অল্পসময়ের মধ্যে এটি দরিদ্র মহিলাদের অন্যতম বৃহত্তম এনজিওতে পরিণত হয়। মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি, শান্তি ও সহমর্মিতার ওপর বিশ্বাসই এর কার্যক্রমকে পরিচালিত করে। এটি দেশের প্রথম বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন যা সমাজের প্রান্তিক পর্যায় থেকে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড শুরু করে।
১৯৯৯ সালে টিএমএসএস ১৭টি জেলার ৮৮টি উপজেলায় ৩৪২টি ইউনিয়নে কাজ করে। ২,৪৭৫টি গ্রাম জুড়ে এর কার্যক্রম ছড়িয়ে আছে। সংস্থাটির লক্ষ্যভিত্তিক সুবিধাভোগী সদস্যের সংখ্যা ২,৬৮,২০০ পরিবার ও সম্প্রদায়ভিত্তিক ৩,২০০,০০০ পরিবার। ১২টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ১৮টি এরিয়া অফিস এবং ৮৮টি শাখা অফিসের মাধ্যমে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বগুড়া শহরের ৬ কিমি উত্তরে বগুড়া-রংপুর হাইওয়ের পাশে এর প্রধান কার্যালয়। টিএমএসএস প্রবলভাবে মূল্যবোধ-চালিত একটি সংস্থা। এটি সব সময় সত্যিকারের দরিদ্র, অতি দরিদ্র এবং প্রান্তিক নারী (আদিবাসী এবং অন্যান্য)দের সামর্থ্য উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দেয়। নিরক্ষর মানুষ, যাদের ০.৫০ একরের কম জমি আছে এবং যারা বিভিন্ন ধরনের শোষণের শিকার মূলত তারাই টিএমএসএস-এর সুফলভোগী।
টিএমএসএস প্রশিক্ষণ, ক্ষমতায়ন, প্রতিষ্ঠান সংগঠন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়ন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, লিঙ্গ সম্পর্ক উন্নয়ন, কৃষি, মৎস্য ও বনায়ন, দরিদ্রদের স্বার্থে গণতন্ত্র সংহতকরণ এবং পল্লী উন্নয়নের মতো বহুবিধ কর্মসূচির সাথে যুক্ত। [মোঃ ওয়াজেদ আলী]
তথ্য সূত্রঃ বাংলাপিডিয়া (ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখ)