
- লেখক: মো. তানজিজুল ইসলাম স্মরণ
- এডিটর-ইন-চিফ, বগুড়া লাইভ
- বগুড়া প্রতিনিধি, বিজয় টিভি
এশিয়ার সংবাদ জগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশ এশিয়ান মিডিয়া লিডারস সামিট ২০২৫। এখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাওয়া আমার পেশাগত জীবনের বড় অর্জন এবং ব্যক্তিগতভাবে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
সিঙ্গাপুর- দৃশ্য, শৃঙ্খলা ও শেখার পরিবেশ
সিঙ্গাপুরে নেমেই চোখে পড়ে তাদের নিখুঁত শৃঙ্খলা। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে শহরের প্রতিটি সড়ক- পরিচ্ছন্নতা, দ্রুতগতি আর প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থায় যেন এক আদর্শ নগর।
সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে সিঙ্গাপুরের অরচার্ড এলাকার অভিজাত স্থাপনা হোটেল কনরাডে। চারপাশে সুউচ্চ ভবন, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও প্রযুক্তির সুনিপুণ ব্যবহার মনে হচ্ছিল যেন ভবিষ্যতের কোনো শহরে হাঁটছি।
হোটেলে ফিরে নিরিবিলি পরিবেশে নিজের মতো করে সময় কাটানো ছিল সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক অংশ।


বিশ্বের শীর্ষ সংবাদ নেতাদের সঙ্গে একই মঞ্চে
সামিটের প্রথম সেশন থেকেই বোঝা গেল- এটি শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং ভবিষ্যতের সাংবাদিকতা কোন পথে এগোবে, তার স্পষ্ট দিকনির্দেশনা।
এশিয়ার ২০০ জন নির্বাচিত মিডিয়া নেতাসহ ইউরোপ, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকার মোট ৩৬টি দেশের সম্পাদক, সিইও, প্রযুক্তিবিদ ও ডিজিটাল উদ্ভাবকেরা এতে অংশ নিয়েছেন।
মূল প্রতিপাদ্য: “বিশ্বাস ও রূপান্তর”
আজকের সংবাদমাধ্যমের দুটি বড় চ্যালেঞ্জ-
পাঠকের আস্থা পুনর্গঠন
দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা
সামিটের আলোচনাগুলো মূলত এই দুই বিষয়কে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে।
সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, তথ্যভিত্তিক সংবাদ ও ডিজিটাল রূপান্তর
ওয়ান-ইফরার থমাস জ্যাকব ভবিষ্যতের সাংবাদিকতার দিক-নির্দেশনা তুলে ধরেন-
সংবাদ হবে আরও তথ্যভিত্তিক,
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাংবাদিকতার সহায়ক হবে,
নিউজরুম হবে স্বয়ংক্রিয়,
বিশ্লেষণধর্মী তথ্যের মূল্য বাড়বে আরও বেশি।
কানাডার দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল এবং সিঙ্গাপুরের এসপিএইচ মিডিয়া দেখিয়েছে- সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক সংবাদ মডেলই ভবিষ্যতের টেকসই পথ।
মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক- সাংবাদিকতার প্রকৃত শক্তি
একটি আলোচনায় বলা হয়- “যে সংবাদ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে না, তা টিকে থাকে না।”
জেলার মাঠে বা গ্রামের মানুষের পাশে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকায় এই বক্তব্য আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। মানুষের ভাষা, অনুভূতি ও সমস্যার সঙ্গে সংযোগই সাংবাদিকতার প্রাণ।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: সুযোগ ও সতর্কতা
সমাজ উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি এজরা ঈমান বলেন- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজ সহজ করবে, তবে মানুষের তত্ত্বাবধান জরুরি। নৈতিকতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা ভবিষ্যতের সাংবাদিকতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থাৎ, ভবিষ্যতের সাংবাদিকতা হবে মানুষ ও প্রযুক্তির যৌথ প্রয়াস।
বিশ্বাস- আজকের সাংবাদিকতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ
ব্লুমবার্গ মিডিয়ার প্রতিনিধিরা তুলে ধরেছেন-
আজ পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন;
কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যতা থাকলে পাঠক নিজেরাই ফিরে আসে।
এটাই সাংবাদিকতার সবচেয়ে মূল্যবান শিক্ষা।
নেতৃত্ব, দল পরিচালনা ও ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি
জেরেমি ক্লিফোর্ড বলেন- পরিবর্তনকে গ্রহণ করাই একজন ভালো মিডিয়া নেতার প্রধান গুণ। দলকে অনুপ্রাণিত করা, নতুন প্রজন্মকে ডিজিটাল সাংবাদিকতার জন্য প্রস্তুত করা- এটাই ভবিষ্যতের নেতৃত্ব।
গুগল ও ইউএফ-এর প্রতিনিধিরা জানান- “নির্মাতা অর্থনীতি” মিডিয়া শিল্পে নতুন সুযোগ তৈরি করছে। সংবাদকর্মী ও কনটেন্ট নির্মাতারা প্রতিযোগী নয়; বরং সহযোগিতার নতুন পথ তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমার বক্তব্য
আমি বিভিন্ন দেশের সংবাদ নেতাদের সামনে তুলে ধরেছি- বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের বর্তমান অবস্থা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের দ্রুত অগ্রগতি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জ গ্রামীণ সাংবাদিকতার গুরুত্ব টেকসই গণমাধ্যমের সম্ভাবনা এবং বগুড়া লাইভ কীভাবে মানুষের পাশে কাজ করছে।
অনেক আন্তর্জাতিক সম্পাদক বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রগতি প্রশংসা করেছেন। কেউ কেউ ভবিষ্যতে যৌথভাবে কাজ করারও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন-এটি আমার জন্য বড় প্রাপ্তি।

ব্যক্তিগত অনুভূতি-নতুন দিগন্তের সূচনা
এই সম্মেলন আমার চিন্তা, উপলব্ধি ও দায়িত্ববোধকে আরও গভীর করেছে।
আমি উপলব্ধি করেছি- সাংবাদিকতার শক্তি শুধু খবর প্রচারে নয়; বরং মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করা, আস্থা গড়ে তোলা এবং প্রযুক্তিকে সমাজের কল্যাণে ব্যবহারের মধ্যেই নিহিত।
শেষ কথা-আজীবনের অনুপ্রেরণা
এশিয়ান মিডিয়া লিডারস সামিট ২০২৫ আমাকে শিখিয়েছে-
সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে আছে প্রযুক্তি, বিশ্বাস ও উদ্ভাবনের ওপর।
দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমি গর্বিত। এ অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের সাংবাদিকদের জন্যও এক বড় অনুপ্রেরণা।
বিশ্বের নামকরা সম্পাদক ও মিডিয়া নেতাদের সঙ্গে একই মঞ্চে বসে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা-এটি আমার জীবনের অন্যতম গর্বের স্মৃতি।
তিনি বলেন, এই অর্জন শুধু আমার নয়, বগুড়াসহ বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজেরও সম্মান।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিখ্যাত সংবাদ সংস্থা ওয়ান-ইফরা (WAN-IFRA) আয়োজিত এই সম্মেলন একজন সাংবাদিকের জন্য শুধু সম্মান নয়; বরং জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।



