বগুড়া সদর উপজেলা
প্রধান খবর

টিএমএসএস থেকে দখলমুক্ত হওয়া করতোয়া নদীর পথ এখনও বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়ায় ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) দখল থেকে উদ্ধার হওয়া করতোয়া নদীর গতিপথ এখনও বন্ধ রয়েছে। এই গতিপথ খুলে দিয়ে সেখানে টিএমএসএস কর্তৃপক্ষকে ব্রিজ নির্মাণ করার কথা। এ জন্য তাদের ছয় মাস সময় বেঁধে দেয়া আছে বলে জানিয়েছেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) হোসনা আফরোজা।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সদর উপজেলার বাঘোপাড়ায় টিএমএসএসের গ্লাস ফ্যাক্টরি এলাকায় দখলমুক্ত হওয়া করতোয়া নদী পরিদর্শনে এসে এই কথা জানান তিনি।

স্থানীয়দের এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে এদিন দুপুরে একাধিক সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে সেখানে নদীর সীমানা বরাবর বৃক্ষরোপণ করেন ডিসি।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ৯ এপ্রিল টিএমএসএসের দখলে থাকা ভূমির ওপর গড়ে তোলা একটি গ্লাস ফ্যাক্টরিসহ ১১টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। অভিযানে টিএমএসএসের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিসিএল গ্লাস ফ্যাক্টরির কয়েকটি স্থাপনা ভেঙে ফেলে প্রশাসন। এতে প্রায় ৯৩ শতাংশ জমি দখলমুক্ত হয়।
উচ্ছেদ অভিযানের পর জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড উদ্ধার হওয়া করতোয়া নদীর সীমানা নির্ধারণ করে দেয়।

সম্প্রতি টিএমএসএসের বিরুদ্ধে সেই সীমানাকে উপেক্ষা করে কাজ চালানোর অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা। এ কারণে ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেন বগুড়ার ডিসি।

পরিদর্শনে সার্ভেয়ার দিয়ে পুনরায় সীমানা পরিমাপ করে যাচাই করা হয়। এরপর নদীর সীমানায় বিভিন্ন ধরণের বৃক্ষ রোপণ করেন তিনি।

পরবর্তীতে টিএমএসএসের মেডিকেল কলেজ এলাকা পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসন। সেখানে খালের পানিতে ফেলে দেয়া হাসপাতালের আবর্জনা ও সংস্থাটির বিসিএল পেপার মিলের ইটিপি (জল শোধনাগার) ব্যবস্থা দেখেন তারা। পরে এসব বিষয়ে তাদের সতর্ক করেন জেলা প্রশাসক।

ডিসি হোসনা আফরোজা বলেন, আমরা করতোয়া নদীর সীমানা পরিদর্শন করতে এসেছিলাম। এখানে স্থানীয়দের একটি শঙ্কা ছিল যে, নদী দখলমুক্ত হওয়ার পর ফের দখল হয় কিনা? তবে আমরা নদীর জায়গা পরিমাপ করে দেখলাম, সব সীমানা ঠিক আছে।

নদীর গতি পথ খুলে দেয়ার প্রসঙ্গে ডিসি জানান, টিএমএসএসের গ্লাস ফ্যাক্টরির জন্য চলাচলের রাস্তাটি করতোয়া নদীর গতিপথ বন্ধ করে করা হয়েছিল। অভিযানের পর তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল নদীর মুখ খুলে দিয়ে এখানে তারা নিজ খরচে ব্রিজ তৈরি করবে। এ জন্য টিএমএসএসকে ছয়মাসের সময় দেয়া হয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষে এই ব্রিজ তৈরি করবেন তারা। সেই সময় শেষের দিকে, তাদের ফ্যাক্টরির কাজও শেষের দিকে।

এসব বিষয়ে টিএমএসএসের কর্মকর্তারা জানান, খালে আশেপাশের গ্রামের লোকজন ময়লা আবর্জনা ফেলে। পেপার মিলের জন্য ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে তাদের ইটিপি স্থাপন করা আছে। টিএমএসএস কোনোভাবেই নদীতে বর্জ্য ফেলে না। এছাড়া সংস্থাটির আইন বিষয়ক কর্মকর্তা উপপরিচালক নজিবর রহমান উচ্ছেদ করা স্থানটি নদীর জায়গা নয় দাবি করেন। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা নোটিশ পেয়েছিলাম। নোটিশের প্রেক্ষিতে আদালতে যাই। আদালতে জেলা প্রশাসককে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। পরে স্থগিতাদেশ শুনানির পর তুলে নেয়া হয়। পরে আবার আমরা জেলা জজের কাছে আপিল করেছি। এটা এখনও প্রক্রিয়াধীন আছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে টিএমএসএস বিরুদ্ধে বিসিএল গ্লাস কারখানা নির্মাণে নদীর জায়গা দখলের কথা উল্লেখ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। প্রতিবেদনে বগুড়া শহরের ‘করতোয়া নদী পুনঃখনন ও ডান তীরে স্নোপ প্রোটেকশন’ প্রকল্প বাস্তবায়নে নদীর সীমানা নির্ধারণে জরিপের কথা উল্লেখ করা হয়। জরিপে টিএমএসএসের বিরুদ্ধে নদীর তীরসংলগ্ন ৯৩ দশমিক ১৫ শতক জায়গা দখল করে ১১টি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ছাড়াও নদী ভরাট ও পানিদূষণের অভিযোগ করা হয়। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৯ এপ্রিল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button