তফশিল ঘোষণায় কেটে গেলে নির্বাচনের অনিশ্চয়তা
সব দলের নেতা-কর্মীরা এই ঘোষণাকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়ায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। সব দলের নেতা-কর্মীরা এই ঘোষণাকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী, নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনে মনোয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই চলবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। রিটানিং অফিসার মনোয়নপত্র বাছাইয়ের বিষয়ে আপত্তি জানানোর আবেদনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ জানুয়ারি। আর ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি ওইসব আপত্তি নিষ্পত্তি হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২০ জানুয়ারি। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ২১ জানুয়ারি।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই রাজধানীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো বগুড়াতেও দলীয় নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।
একাধিক প্রার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা তফসিল ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে যে জল্পনা-কল্পনা চলছিল, তার ইতি টানায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। একই সাথে তারা নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, নির্বাচন যেন কোনো প্রকার কারচুপি ও হানাহানি ছাড়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়, এ জন্য কমিশনকে অবশ্যই উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।
বগুড়া-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী কাজি রফিকুল ইসলাম জানান, তফশিল ঘোষণার মাধ্যমে জাতি শঙ্কামুক্ত হলো, যে তারা একটা ফ্রি এন্ড ফেয়ার নির্বাচন পেতে যাচ্ছে। নির্বাচনের দায়িত্বে যারা থাকবেন, তাদের কাছে অনুরোধ প্রায় ১৭ বছর পর একটা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও নিরেপেক্ষ হয়। মানুষ যেন নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। আর একটা বিষয়, এখন আমরাও বেশি করে ভোটারদের কাছে যেতে উদ্যমী হবো। তফশিল ঘোষণার পরপরই আমাদেরও নির্বাচনের একটা কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে।
নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করে বগুড়া-৭ আসনের জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী গোলাম রব্বানী জানান, তফশিল ঘোষণাকে আমরা সবাই সাধুবাদ জানাই। তবে কোনো পক্ষের ইন্ধনে যেন এই নির্বাচন পিছিয়ে না পড়ে, নিয়মমাফিক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যেন ভোটগ্রহণ হয় সেদিকে কমিশনকে অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে।
তফশিল ঘোষণার কারণে নির্বাচন কমিশনকে সাধুবাদ জানান বগুড়া-৩ আসন থেকে এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী ও জেলা সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ইজাজ আল ওয়াসী জ্বিম। তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের সকল স্তরের মানুষের দীর্ঘদিনের আশা-আক্ঙ্খার বিষয় ছিল। তফশিল ঘোষণা হবে এটা জেনেই সবার অনিশ্চয়তা কেটে গেছে।
তফশিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন করে উদ্দীপনা ফিরে এসেছে। বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আরিফ হাসান জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমরা একটা ঘোষণার অপেক্ষায় ছিলাম। আজ তা হয়ে যাওয়ায় আমাদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন করে প্রাণ ফিরে এসেছে। তবে আমাদের মূল দাবি, কমিশন যেন সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগে কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়।
বগুড়ার কাহালু উপজেলার বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান, আমরা অনেক দিন ধরে নির্বাচন নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিলাম। কারণ ভোট আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় অধিকার। তফশিল ঘোষণার কথা জানার পর থেকে আমরা অনেকটাই নিশ্চিন্ত। এখন নির্বাচন কোনো সহিংসতা ছাড়া, ঝামেলামুক্ত হলেই আমরা খুশি।
এবার দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। আর বগুড়ায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ২৯ লাখ ৪১ হাজার ৬৪৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৪৩০ জন ও মহিলা ভোটার ১৪ লাখ ৮১ হাজার ১৭৬ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৩৯ জন।


