জাতীয়

নতুন বছরের প্রথম মাসেই রপ্তানি আয়ে ধাক্কা

নতুন বছরের প্রথম মাসেই রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা খেল বাংলাদেশ। সদ্য শেষ হওয়া জানুয়ারি মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৪৩ কোটি ৬৮ লাখ ডলার আয় হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ৫ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

করোনাভাইরাস মহামারিতে গত এপ্রিলে রপ্তানি আয় তলানিতে পৌঁছালেও এরপর ধীরে ধীরে বাড়ছিল, তবে ডিসেম্বরে এসে ধাক্কা খায়। ২০২১ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতেও সেই ধাক্কা অব্যাহত রয়েছে।

জানুয়ারিতে এই ধসের কারণে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সার্বিক রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ১ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে সাড়ে ৪ শতাংশের মতো।

ইউরোপ-আমেরিকায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের যে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে, তার প্রভাবেই রপ্তানি আয় হোঁচট খেয়েছে বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারক ও অর্থনীতির গবেষকরা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মঙ্গলবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ২ হাজার ২৬৭ কোটি (২২.৬৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে।

এই সাত মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ২ হাজার ৩৪৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয়  হয়েছিল ২ হাজার ২৯২ কোটি ২১ লাখ ডলার।

এ হিসাবেই জুলাই-জানুয়ারি সময়ে রপ্তানি আয় কমেছে ১ দশমিক ১ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ৫ শতাংশ।

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-জানুয়ারি সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৮৪০ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৪ ৪ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে কম ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

এই সাত মাসে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৯৯৮ কোটি ৯১ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে ওভেন পোশাক রপ্তানিতে। জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এই  খাত থেকে আয় হয়েছে ৮৪১ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে, মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ দশমিক ২ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।

করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ায় গত এপ্রিলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় তলানিতে ঠেকেছিল। ওই মাসে সব মিলিয়ে মাত্র ৫২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল মাত্র ৩৬ কোটি ডলার।

বিধি-নিষেধ শিথিলে কারখানা খোলার পর মে মাসে রপ্তানি আয় কিছুটা বাড়ে, জুনে তার চেয়ে অনেক বাড়ে।

এরপর চলতি ২০২০২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেও (জুলাই, অগাস্ট ও সেপ্টেম্বর) সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি ওই তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় দেশে আসে।

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল দশমিক ৫৯ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছিল ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ।

জুলাই মাসের ওই আয়ের মধ্য দিয়ে সাত মাস পর রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় মাস আগস্টে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয় ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ কমলেও নভেম্বরে দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়েছিল। তবে ডিসেম্বর মাসে আগের বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছিল ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ।

রপ্তানি আয়ের সাত মাসের এই চিত্র বিশ্লেষণ করে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর জাগরণকে বলেন, “আমাদের রপ্তানি আয় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান বাজার ইউরো-আমেরিকায় কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয়-তৃতীয় ঢেউয়ে ফের ধাক্কা লেগেছে। ওই দেশের মানুষ এখন আর খুব প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য কোনো পণ্য কিনছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “তবে আমাদের কিন্তু একটা বিষয় সব সময় মনে রাখতে হবে। আর সেটা হলো, গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছিল ১৭ শতাংশ। তখন কিন্তু কোভিড-১৯ ছিল না। অর্থাৎ আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, রপ্তানি খাতে নেতিবাচক ধারা কিন্তু মহামারীর আগে থেকেই ছিল।”

আহসান এইচ মনসুর বলেন, “এই কঠিন সময়ে প্রবৃদ্ধি হওয়াটাকেই আমি অনেক বড় অর্জন বলে মনে করি। সাত মাসে ১ শতাংশ রপ্তানি আয় কমা খুব বেশি বিচলিত হওয়ার মতো বিষয় নয়। অর্থবছর শেষে যদি সামান্য প্রবৃদ্ধিও থাকে, সেটাকেই আমি বড় অর্জন বলে মনে করব।”

আশা শুধু পাটে

এই সংকটের মধ্যেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির বড় প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ৭৬ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১৪ দশমিক ৫৭  শতাংশ।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার আয় করেছিল, যা ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।

অন্যান্য পণ্য রপ্তানি

মহামারিকালে ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ। হ্যান্ডিক্রাফট রপ্তানি বেড়েছে ৪৮ দশমিক ২২ শতাংশ।

তবে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। কৃষিপণ্য রপ্তানি কমেছে ২ শতাংশ।

হিমায়িত মাছ রপ্তানি কমেছে ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ।

করোনাভাইরাস মহামারির এই সময়ে চলতি অর্থবছরে ৪৮ বিলিয়ন (৪ হাজার ৮০০ কোটি) ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে সরকার, যা গত অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৪০ লাখ (৩৩.৬৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করে, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় কম ছিল ২৬ শতাংশ। সূত্র: জাগরণ

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button