একটি মানবিক ৯৯৯ নম্বর’র গল্প
মানুষ মানুষের জন্য সবার মনে কি আছে জানে অন্তর্যামী, এবার বলবো এক অন্ধ মহিলার জীবন কাহিনী।
জানালেন বগুড়া মেডিকেল ফাড়ির এস আই আব্দুল আজিজ মন্ডল- মোছা: মুনিয়া (২২) অপদার্থ জন্মদাতা মোকছেদ খন্দকার, মাতা মৃত আঙ্গুরী বেগম, গ্রাম দেওগ্রাম দক্ষিণ পাড়া, থানা কাহালু, জেলা বগুড়া। হতভাগী মুনিয়ার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন খেলাধুলা করার সময় সহপাঠীর ধান কাটা কাঁচির আঘাতে তার ডান চোখের কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যায়।
অনেক চিকিৎসা করেও তার চোখ ভালো হয়নি। পরবর্তীতে এক চোখের আলোয় জীবন চলতে থাকে মনিয়ার।
বিধিবাম হলে যা হয় ,ডান চোখ নষ্ট হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে তার বাম চোখ ও নষ্ট হয়ে যায় ২০১৫ সালে।
এবার মুনিয়ার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার দুনিয়া, দুটি চোখে অন্ধ হয়ে যায়। দিন যায় মাস যায় এভাবে কেটে যায় দুই বৎসর। এরমধ্যে ২০১৮ সালে মুনিয়ার মা মুনিয়া কে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যায়। মনিয়া হয়ে পরে অসহায়। মুনিয়ার জন্মদাতা পিতা মুনিয়ার খেয়াল না করিয়া দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। মা হারা অন্ধ মুনিয়া হয়ে যাই দিশেহারা। তার জীবন থেকে মুছে গেল মায়ের ভালোবাসা, বাবার আশীর্বাদ শুরু হলো অবহেলা আর অযত্ন। এদিকে মনিয়া ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। হঠাৎ একদিন মুনিয়া তার বুকের ডান পাশে হালকা ব্যথা এবং মাংস গোটা অনুভব করে। অনেক চেষ্টা করে এলাকার লোক এর সহায়তায় সে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়, ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অন্ধ মুনিয়ার ব্রেস্ট টিউমার হয়েছে বলে জানায়। অন্ধ মুনিয়া মনের দিক দিয়ে ভেঙ্গে পড়ে যায়।
ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশন মোতাবেক মনিয়াকে (FNAC) টেস্ট করানোর জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।যেকোনো কারণেই হোক গত তিনমাস মনিয়া এই টেস্ট করাতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে তার গ্রামের একলোক তাকে মেডিকেলে আসার কথা বলে এবং সেই লোক হাজির থেকে উক্ত টেস্ট করাইয়া দিবে মর্মে ওয়াদা করে। মনিয়া তার কথা বিশ্বাস করে দুর্গাপুর থেকে বাসযোগে বগুড়া মেডিকেলে চলে আসে।
মেডিকেল এর আউটডোরের পাশে ওই লোকটির অপেক্ষায় সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
অবশেষে সেই লোকের দেখা না মিললে মুনিয়ার মনে পড়ে যায় ৯৯৯ এর কথা।
মুনিয়া বুদ্ধি করে তার নিজের মোবাইল থেকে ৯৯৯ এ ফোন করে বগুড়া সদর থানার ডিউটি অফিসারের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করেন। সদা সর্বদা অতন্দ্র প্রহরীর মতো ডিউটি অফিসারের মোবাইল নাম্বারে মুনিয়ার ফোন পেয়ে , সদর থানার ডিউটি অফিসার আমি হতভাগা আজিজ মন্ডল এর নাম্বার দিয়ে দেয়। অবশেষে মুনিয়া আমার নাম্বারে ফোন করে বলে যে আমি একজন অন্ধ মানুষ ডাক্তার আমাকে একটা টেস্ট দিয়েছেন সেটা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় তলায় হয়, আপনি আমার কাছে আসেন এবং সেখানে আমাকে নিয়ে যাবেন। আমি কাল বিলম্ব না করে মুনিয়া কে খুঁজতে থাকি, লোকেশন জটিলতার কারণেই মুনিয়াকে পাইতে আমার কিছুটা বেগ পেতে হয়। অবশেষে চতুর্থ লোকেশন মেডিকেল কলেজের মেনগেট জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে মুনিয়া কে খুঁজে পাই।
মুনিয়ার মুখে সবকিছু শোনার পরে জানতে পারলাম মনিয়া কারো হাত না ধরে হাঁটতে পারে না। তারপর মনিয়ার হাত ধরে অটো রিকশায় করে মেডিকেল কলেজে এর দ্বিতীয় তলায় পৌছালাম। যাবতীয় কার্যক্রম শেষে আবার তাকে দুর্গাপুরের বাসে উঠিয়ে দিলাম। বাসে উঠার আগে মুনিয়া জানতে চাইলো যে আমি কি করি। মুনিয়াকে বললাম আমি পুলিশের চাকরি করি। মুনিয়া বললো এতক্ষণ কি আমি একটা পুলিশের হাত ধরেছিলাম? আমি বললাম হা। মুনিয়া বললো এত ভালো পুলিশ এর কথা আমি আগে কখনো শুনিনি।
যাই হোক প্রতিনিয়ত যে ভালো কাজগুলো আমরা করছি তার পাশাপাশি আজকে একটি অতি উত্তম কাজ করলাম। প্রকাশ থাকে যে মুনিয়ার দুটি চোখ নষ্ট হবার পর ভুল চিকিৎসা এবং মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ সেবন করার কারণে মনিয়ার পুরো শরীরে ঘা হয়ে যায়, ঘা ভালো হবার পর কাল্পনিকভাবে তার পুরো শরীর সাদা হয়ে যায়। মুনিয়া কে প্রথমে দেখলে কুষ্ঠ রোগী মনে হয়, কিন্তু আসলে মনিয়া কুষ্ঠ রোগী নয়। ভালো থাকবেন সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য যেন সারা জীবন মানুষের উপকারে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে পারি।