বগুড়া জেলা
প্রধান খবর

শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে কার অনুমতিতে হেলিকপ্টার অবতরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘড়িতে তখন দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট। বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের আকাশে হঠাৎ করেই দেখা মেলে একটি হেলিকপ্টারের। মুহূর্তেই এলাকাজুড়ে ওঠে কৌতূহলের ঢেউ। কপ্টারের রোটারের শব্দে স্থানীয়রা ছুটে আসেন মাঠের দিকে। স্থানীয়দের ধারণা চান্দুর সবুজ গালিচা ভাগ্য খুলতে রাজধানী থেকে এসেছেন বিসিবির কর্তারা।


কিন্তু ভুল ভাঙতে সময় লাগে না। স্টেডিয়ামের দায়িত্বরতদের কাছে জানা যায়, বিসিবির কেউ নয়- এই হেলিকপ্টারে করে এসেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বড় কর্মকর্তা। দেশসেরা এই খেলার মাঠে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তির অবতরণের খবরটি শোনার পর থেকে স্থানীয়দের মাঝে অসন্তোষ ওঠে।


খোঁজ নিতে গেলে জানা যায় হতবাক হওয়ার মতো ঘটনা, হেলিকপ্টারটি অবতরণে অনুমতির বিষয়টি কেউ জানেন না।
নিয়ম বলছে, খোলা মাঠে বেসরকারি হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং-এর জন্য সাধারণত বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অনুমতি নিতে হয়। এসব ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন ও জমির মালিকের অনুমতিও প্রয়োজন হতে পারে। নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম না থাকলেও, নিরাপদ এবং সুরক্ষিত ল্যান্ডিংয়ের জন্য অনুমতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বেসকারি বিমান পরিচালনা কর্তৃপক্ষ আইন ২০১৭ অনুযায়ী, অন্তত তিন দিন আগে জমির মালিককে অবগত করার নিয়ম। তবে জরুরী অবতরণের ক্ষেত্রে এই আইন মানার বাধ্যবাধকতা নেই।


স্থানীয়রা জানান, হেলিকপ্টারের শব্দ শুনে আমরা ছুটে এসেছি। আমরা ভেবেছিলাম, ঢাকা থেকে বিসিবির লোকজন এসেছেন মাঠ পরিদর্শনের জন্য। শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে আবার আন্তর্জাতিক খেলা হবে। কিন্তু পরে শুনলাম বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন এসেছে। ঘটনাটি দেখে হতাশ আমরা।


হেলিকপ্টার অবতরণের বিষয়ে প্রথমে যোগাযোগ করা হয় শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার জামিলুর রহমান জামিলের সঙ্গে। তিনি জানান, রহিমা আফরোজ কোম্পানির এমডি ঢাকা থেকে বগুড়া আসবেন, তাদের কি যেন একটি প্রোগ্রাম আছে। সেটি মাঠে নামার জন্য যোগাযোগ করেন তারা। কিন্তু আমরা তো অনুমতি দিতে পারি না। তখন তাদের পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে বলি। পরে তারা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেন। এরপর ডিএসবির লোকজন এসেছিলেন। যতক্ষণ হেলিকপ্টারটি ছিল, ততক্ষণ পুলিশের লোক ছিল।


বেসকারি হেলিকপ্টার কি স্টেডিয়ামে নামতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ভেন্যু ম্যানেজার বলেন, হ্যা নামতে পারে। এর আগেও নেমেছে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে হেলিকপ্টার অবতরণে কঠোর নীতি: অনুমতি ছাড়া নামানো দণ্ডনীয় অপরাধ


তবে জেলা পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। জেলা পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা বগুড়ায় একটি প্রোগ্রামের জন্য হেলিকপ্টারে এসেছেন। আমরা তো অবতরণের অনুমতি দেইনি। কারণ আমরা অনুমতি দেয়ার কেউ না। আমাদের কাছে নিরাপত্তার চাওয়া হয়েছিল। আমরা সেটি দিয়েছি।
পরবর্তীতে বিসিবির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন জেলা পুলিশ সুপার।


এরপর বিষয়টি নিয়ে জানতে বিসিবির পরিচালক রাবিদ ইমাম কল দেয়া হয়। ফোনকলে বিসিবি পরিচালক জানান, চান্দু স্টেডিয়ামের মাঠটি তো বিসিবির না। মাঠ দেখা ক্রীড়া পরিষদের দায়িত্ব। তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন রাবিদ ইমাম।


জানতে চাইলে বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার আহ্বায়ক ও জেলা প্রশাসক মো: তৌফিকুর রহমান জানান, এ ধরনের ল্যান্ডিংয়ে কোনো অনুমতি দেননি তিনি। বিষয়টি তার অজান্তেই ঘটানো হয়েছে।


তিনি বলেন, এটা তো আমাকে কেউ জানায়নি। সরকারি হেলিকপ্টার নামলেও আমাকে জানাতে হবে। বেসরকারি হেলিকপ্টার নামতে গেলে আগে আমাদের কাছে আবেদন করতে হবে। আমরা যদি মনে করি এটা ঠিক আছে, সেক্ষেত্রে তারা নামতে (হেলিকপ্টার অবতরণ) পারেন। কিন্তু এতে তো আমাদের পারমিশন লাগবে।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button