জেনে নিন নিপাহ ভাইরাস কী? কিভাবে সতর্ক থাকবেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: শীতে খেজুর রস খাবেন কিনা ভাবছেন? নিপাহ ভাইরাস নিয়ে ভয় কাজ করছে? হ্যাঁ কাঁচা খেজুর রস খেতে গিয়ে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু নিপাহ ভাইরাস কী? কিভাবে আক্রান্ত হয় মানুষ, লক্ষণ কী?
চলুন জেনে নেয়া যাক–
নিপাহ ভাইরাস মূলত বাদুড় (বিশেষত Pteropus বা ফলের বাদুড়) থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। অর্থ্যাৎ বাদুড়ের লালা, প্রস্রাব বা মলের সাথে মিশে থাকা দূষিত খেজুরের রস বা ফল খেলে বা কাঁচা রস পান করলে সংক্রমিত হয়, আবার আক্রান্ত ব্যক্তি থেকেও মানুষে ছড়াতে পারে।
১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ায় প্রথম নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়। শুকরের মাধ্যমে ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছিল। আর বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় ২০০১ সালে। প্রথম মেহেরপুরে অজ্ঞাতনামা মস্তিষ্কের প্রদাহরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। এরপর ২০০৩ সালে ফরিদপুরে অনেক বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়।
এরপর ২০০৫ সালে টাঙ্গাইলে ভাইরাসটির আউটব্রেক হয়। তখন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন, বাংলাদেশে হওয়া বেশিরভাগ প্রাদুর্ভাবগুলোই দেখা গেছে শীতের সময় হয়েছে। খেজুরের কাঁচা রস বাঁদুড়ের মাধ্যমে দূষিত হয় এবং সেই কাঁচা রস যদি মানুষ খায় তাহলে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এ রোগে মৃত্যুর হার ৭০%।
কিভাবে ছড়ায়–
আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, বাদুড় যখন খেজুরের রস খেতে আসে, তখন তাদের লালা, প্রস্রাব বা মল রসে মিশে যায়। এই দূষিত রস কাঁচা বা আধা সেদ্ধ অবস্থায় পান করলে মানুষ আক্রান্ত হয়। বাদুড় খাওয়া বা আক্রান্ত ফল সরাসরি খেলে ভাইরাস ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের তরল (যেমন, লালা, রক্ত, প্রস্রাব, মল) বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে, যেমন রোগী বা স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে, নিপাহ ভাইরাস ছড়াতে পারে।
লক্ষণ–
নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মস্তিষ্কের প্রদাহ ঘটে। মস্তিস্ক সংক্রমিত হয়। প্রচণ্ড জ্বর, তীব্র মাথা ব্যথা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, মুখ দিয়ে লালা ঝরা, আবোলতাবোল কথা বলা, জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
প্রতিরোধের উপায়–
নিপাহ ভাইরাস রোগে এখনও কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। কোনো ভ্যাকসিনও তৈরি হয়নি। তাই ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিরোধ ব্যবস্থাই সম্বল।
কাঁচা খেজুরের রস পান থেকে বিরত থাকুন: ফুটিয়ে বা ভালোভাবে গরম (৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) করে রস পান করুন অথবা গুড় (ঝোলা, পাটালি) ব্যবহার করুন। দূষিত ফল এড়িয়ে চলুন: বাদুড় খাওয়া বা পড়ে থাকা ফল খাবেন না।
পরিচ্ছন্নতা: আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বা মৃত্যুর পর তার দেহ সৎকার করার সময় সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করুন।
ভয়াবহ হওয়ার কারণ–
আইইডিসিআরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা বলছেন, বনাঞ্চল কেটে উজার করে ফেলা হয়েছে। আবাস ও খাবারের উৎস নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে কষ্টে থাকে বাদুড়। ফলে বাদুড়ের দেহ থেকে নিপাহ ভাইরাস বেশি নিঃসৃত হয়। জাল দিয়ে খেজুর রসের জায়গা ঢেকে দেয়ার কারণে বাদুড়কে কষ্ট ও পরিশ্রম করে রস খুঁজতে হয়, এতে বাদুড়ের লালা ও প্রস্রাব থেকে ভাইরাস নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায়। খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার পর সর্বোচ্চ ২১ দিন নিপাহ ভাইরাসের সুপ্তিকাল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রস খাওয়ার পর ৩ থেকে ৭ দিন বা ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। আবার কখনো রস খাওয়ার ২১ দিন পরেও কেউ কেউ সংক্রমিত হয়েছেন। আবার মানুষ থেকে মানুষে হাঁচি কাশির মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়ায় বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।
সংস্থাটির মতে, প্রাথমিক সংক্রমণ ও একজন থেকে অন্যজনে ছড়ানোর মাঝে এই রোগের সুপ্তাবস্থার হেরফের হতে পারে, যার সময়সীমা ২ থেকে ৩৬ দিন।
সূত্র: বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার: ঝুঁকিসমূহ ও সংক্রমণের মাধ্যম; ডা. শারমিন সুলতানা, ভাইরোলজি বিভাগ, আইইডিসিআর। দি ডেইলি স্টার।



