আইন ও অপরাধ

বাংলাদেশে হেলিকপ্টার অবতরণে কঠোর নীতি: অনুমতি ছাড়া নামানো দণ্ডনীয় অপরাধ

বাংলাদেশে হেলিকপ্টার অবতরণ কঠোর আইন ও নির্দেশনার মধ্যে পরিচালিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মাঠ, স্টেডিয়াম ও ব্যক্তিগত জমিতে অনুমতি ছাড়া হেলিকপ্টার নামানোর ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

বেসরকারি বিমান চলাচল আইন ২০১৭ অনুযায়ী, অনুমতি ব্যতীত হেলিকপ্টার অবতরণ সরাসরি আইন লঙ্ঘন এবং এ ধরনের ঘটনায় কারাদণ্ড ও জরিমানার মতো শাস্তি হতে পারে।

হেলিকপ্টার অবতরণ একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া। সামান্য ভুলও বড় ধরনের দুর্ঘটনা বা নিরাপত্তা সংকট তৈরি করতে পারে। তাই সরকারি সংস্থাগুলোর অনুমোদন ছাড়া যেকোনো স্থানে হেলিকপ্টার নামানো দণ্ডনীয় অপরাধ।

অবতরণের জন্য যে অনুমতিগুলো বাধ্যতামূলক

১. বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)

হেলিকপ্টার কোথায়, কখন এবং কোন পথে অবতরণ করবে এসব তথ্য আগেই বেবিচককে জানাতে হয়। হেলিকপ্টারের ধরন, যাত্রী সংখ্যা, রুট এবং অবতরণস্থলের বিবরণ জমা না দিলে অনুমতি দেওয়া যায় না।

যে স্থানে নামবে সেটি যদি অনুমোদিত হেলিপ্যাড না হয়, তাহলে তাকে অননুমোদিত স্থানে অবতরণ হিসেবে ধরা হয়। এ ক্ষেত্রে আরও গভীর যাচাই-বাছাই প্রয়োজন।

২. অবতরণস্থলের মালিকানা প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের সম্মতি

যেখানে হেলিকপ্টার নামবে, সেই স্থানের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার লিখিত অনুমতি বাধ্যতামূলক। যেমন, স্টেডিয়াম হলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বা জেলা ক্রীড়া সংস্থা

সরকারি জমি হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর

ব্যক্তিগত জমি হলে মালিক

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলে পরিচালনা কমিটি বা কর্তৃপক্ষ

অনুমতি ছাড়া অবতরণ করলে পুরো দায়ভার পড়ে অবতরণকারীর ওপর।

৩. জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি

জনসমাগম এলাকা বা বড় মাঠে হেলিকপ্টার নামাতে হলে- জেলা প্রশাসক,পুলিশ প্রশাসন,প্রয়োজন হলে দমকল বাহিনী এসব সংস্থার অনুমতি ও প্রস্তুতি দরকার।উদ্ধারকাজ, জননিরাপত্তা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।

৪. নিরাপদ অবতরণ পরিবেশ

অবতরণস্থলে থাকতে হবে-

বড়, খোলা ও সমতল জায়গা (কমপক্ষে ৫০ মিটার ব্যাস)

চারপাশে কোনো বাধা থাকবে না (বৈদ্যুতিক তার, গাছ, লাইটপোস্ট, ভবন)

ধুলা-বালি বা নরম মাটি নয়, যাতে পাইলট দৃশ্য হারিয়ে না ফেলেন

এগুলোর ঘাটতি থাকলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।

অনুমতি ছাড়া অবতরণ কেন বড় অপরাধ

কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়-

বেবিচকের অনুমতি নেওয়া হয়নি

মাঠ বা স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ জানে না

জেলা প্রশাসন কোনো তথ্য পায়নি

পুলিশ শুধু নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়েছে, কিন্তু অনুমতি দেয়নি

এ ধরনের সবই আইন লঙ্ঘন। এর মাধ্যমে জননিরাপত্তা, বিমান নিরাপত্তা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সুরক্ষা বিঘ্নিত হয়।

কোন কোন আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়

১. বেসামরিক বিমান চলাচল আইন, ২০১৭

অনুমতি ছাড়া উড়ান বা অবতরণ করলে শাস্তি-

সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ড

১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা

অপারেটর বা পাইলটের লাইসেন্স বাতিল

২. গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিরাপত্তা আইন

স্টেডিয়াম, বিমানক্ষেত্র, ক্যান্টনমেন্ট বা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অনুমতি ছাড়া অবতরণ করলে শাস্তি-

সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড

জরিমানা

সন্দেহজনক কার্যকলাপ থাকলে আরও কঠোর আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুন: শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে কার অনুমতিতে হেলিকপ্টার অবতরণ

৩. দণ্ডবিধি, ১৮৬০

অবতরণে যদি জননিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়-

৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড

জরিমানা

৪. জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করলে

মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক শাস্তি

জরিমানা

কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা

৫. সামরিক বা সংরক্ষিত এলাকায় অবতরণ

যদি ক্যান্টনমেন্ট বা বিমান বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হয়-

সরকারি গোপনীয়তা আইন অনুযায়ী

সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড

এটি অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।

সারসংক্ষেপ

বাংলাদেশে অনুমতি ছাড়া হেলিকপ্টার নামালে-

  • ৩ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড
  • ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা
  • অপারেটর বা পাইলটের লাইসেন্স বাতিল
  • প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ
    . সামরিক এলাকায় হলে শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছর।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button