বগুড়া জেলা
প্রধান খবর

বগুড়ায় প্রতারণার মামলায় সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মিলন কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়ায় প্রতারণা মামলায় সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি হামিদুল আলম মিলনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। বগুড়ার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. মেহেদী হাসান তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।


এর আগে গত বছরের ২১ আগস্ট হামিদুল ও স্ত্রী শাহজাদী আলমের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করেন জাহেদুর রহমান তোফা নামের এক ভুক্তভোগী। একই অভিযোগে আদালতে পৃথক আরো দুটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন নূর আলম এবং ফোরকান আলী নামের নামের ভুক্তভোগী। তবে সোমবার তোফার মামলায় আদালতে হাজির হলে বিচারক পুলিশের সাবেক এই প্রভাবশালী কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠায়।


সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি হামিদুল হক মিলনের বাড়ি বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায়। বর্তমানে শহরের মালতিনগরের মেধা টাওয়ারে বসবাস করেন। স্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার দায়ে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর এক জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এক মাসের জন্য অসুস্থতার অজুহাতে ছুটি নিয়ে তিনি তিনি বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে স্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন।


আদালত সূত্রে জানা যায়, হামিদুল ইসলামের স্ত্রী শাহজাদী আলমের পরিচালনায় মেসার্স মেধা এন্টারপ্রাইজ নামে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের আওতায় মেধা শাহ ক্যাসেল নামে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।


২০১৮ সালে বগুড়া শহরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পেছনে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনে ফ্লাট বিক্রয়ের কথা বলে ৬ ব্যক্তির কাছ থেকে নগদ ১ লাখ করে টাকা নেয় অতিরিক্ত ডিআইজি হামিদুলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেধা টাওয়ার৷ চুক্তি অনুযায়ী সেখানে দশতালা ভবনও গড়ে তোলে পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর শাহজাদী আলম লিপির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে জমির মালিক ওই ছয় ব্যক্তিকে তাদের পাওনা অনুযায়ী ভবনের ফ্লাট বুঝে দিতে তালবাহানা শুরু করেন অতিরিক্ত ডিআইজি হামিদুল ও তার স্ত্রী।


এই ভবনে নুর আলম, তার স্বজনদের সঙ্গে ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিলে চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তিপত্রের দীর্ঘদিন পার হলেও তাদের তা বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন না।


এই চুক্তিনামা অনুযায়ী পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে ৫,০০,০০০ টাকা ১ নং আসামী শাহজাদী আলমকে দেয়া হবে। এ ছাড়া ফ্লাট নির্মান কালীণ ৯০শতাংশ টাকা শাহজাদী আলমকে দেয়া হবে। আর বসবাসের উপযোগী করে অবশিষ্ট ১০ শতাংশ টাকা নিবেন তিনি।
চুক্তি পত্রের শর্ত মতে ৪২ মাস সময়ের মধ্যে আসামী দুজন ফ্ল্যাট বুঝে দিতে না পারলে অন্যত্র বাড়ি ভাড়ার জন্য প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসাবে দিতে বাধ্য থাকবেন।


এসবের এক পর্যায়ে চুক্তিনামার কোনো শর্ত পালন না করায় আসামিদের কাছে ফ্ল্যাট বিক্রির টাকা ফেরত দেয়ার দাবি জানান ভুক্তভোগীরা। কিন্তু শাহজাদী আলম ও তার স্বামী হামিদুল আলম এই ফ্ল্যাট বা টাকা বুঝে দিতে তালবাহানা শুরু করেন। পরে উপায় না পেয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশও দেন মামলার বাদি ও তার স্বজনেরা। পরে চলতি বছরে নুর আলম বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন।


নুর আলমের আইনজীবী আব্দুল হান্নান পলাশ জানান, বাদল সিদ্দিকী, মিন্টুসহ তিনজনের কাছে ফ্ল্যাটের চুক্তিপত্র করার হয়। পরে তা আমার বাদী পক্ষের কাছে বিক্রি করেন আসামিরা। এরপর তারা ৪০৬ এবং ৪২০ ধারায় অতিরিক্ত ডিআইজি হামিদুল আলম মিলন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। আজ সেই মামলায় উভয়পক্ষের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বগুড়া কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক শহীদুল ইসলাম বলেন, সোমবার দুপুরে আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদলত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। এছাড়া, হামিদুল আলম মিলনের স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থী শাহাজাদী আলম লিপির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেন বিচারক।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button