
নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়ায় নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেও ঘুষ না দেয়ায় চাকরি হয়নি। এমন অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসকসহ (ডিসি) মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন শাহাদত হোসাইন নামে এক চাকরিপ্রার্থী। আগামী ২০ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এর আগে আদালত বিবাদীদের কৈফিয়ত তলব করলেও সময়মতো জবাব না আসায় সংশ্লিষ্ট পদে নিয়োগ কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন বিচারক।
গত ৯ অক্টোবর বগুড়া প্রথম সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলাটি করেন শাহাদাত হোসাইন। তিনি বগুড়া সদরের মাটিডালী এলাকার বাসিন্দা এবং নামুজা এসএসআই ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার ল্যাবসহকারী পদে চাকরিপ্রার্থী।
এ মামলায় বগুড়ার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) প্রধান আসামী করা হয়েছে। ডিসি একই সঙ্গে মাদ্রাসার নিয়োগ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব রুস্তম আলী, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অডিট ও আইন) ইসমাঈল হোসেন, মাদ্রাসার নিয়োগ কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাফিস ফারুক, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
মামলার বিবরণে জানা যায়, শাহাদত হোসাইন মাটিডালী এলাকার নামুজা এসএসআই ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার ল্যাবসহকারী পদে আবেদন করেছিলেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় তিনি ৩৪ দশমিক ৫০ নম্বর পেয়ে প্রথম হন এবং নিয়োগ কমিটির স্বাক্ষরিত ফলাফলও হাতে পান।
অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১৫ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ রুস্তম আলী তাকে ডেকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। শাহাদত হোসাইন ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে ৬ অক্টোবর স্থানীয় পত্রিকায় একই পদে নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর শাহাদত হোসাইন তৎকালীন জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজাকে বিষয়টি জানাতে গেলে কথিতভাবে তাকে কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তিনি লিখিত অভিযোগও জমা দেন। কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না পেয়ে শাহাদত হোসাইন গত ৯ অক্টোবর তৎকালীন জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজাকে প্রধান বিবাদী করে প্রথম সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলাটি (মামলা নং–৭৩৯/২০২৫) দায়ের করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন জানান, মামলা দায়েরের পর আদালত বিবাদীদের কাছে কৈফিয়ত তলব করেন। কিন্তু বিবাদীরা সাত দিনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত সংশ্লিষ্ট পদে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। আগামী ২০ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ রুস্তম আলী তাঁর বিরুদ্ধে আনা ঘুষের অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, চাকরি প্রার্থীর সঙ্গে আমার দেখা পর্যন্ত হয়নি।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী আকন্দ জানান, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পূর্বেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তিনি নতুন জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার আশ্বাস দেন।
এদিকে, মামলার বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) শফিকুল ইসলাম টুকু জানান, মামলাটি ডিসির ব্যক্তিগত নামে হয়নি এটি দায়িত্বশীল পদের বিরুদ্ধে করা একটি নিয়মিত মামলা।
এই মামলার ঘটনার সময় বগুড়ায় জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন হোসনা আফরোজ। তিনি গত ১৬ নভেম্বর দায়িত্ব হস্তান্তর করে বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব পদে যোগদান করেছেন। মামলার বিষয়ে বগুড়ার সাবেক ডিসি হোসনা আফরোজার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।



