
ছবি: সংগৃহীত
দৈনন্দিন জীবনে মানুষ প্রায়শই কথার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণে মা-বাবা, স্ত্রী কিংবা সন্তানের নামে কসম করে থাকে। কিন্তু ইসলাম এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। শরিয়তের বিধান অনুযায়ী, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে কসম করা হারাম এবং তা ছোট শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, “অনেকে মা-বাবা কিংবা অন্য কারও নামে কসম করেন। আবার কোনো রাজনৈতিক দল দেশের মাটির কসম দেয়। এটি জায়েজ নয়। কসম হবে শুধু আল্লাহর নামে।” তিনি আরও জানান, নবীজি (সা.) বলেছেন, কেউ যদি কসম করতে চায় তাহলে সে আল্লাহর নামে কসম করবে, অন্যথায় চুপ থাকবে।
কোরআনেও সততার গুরুত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তুমি যদি সৎ থাক, আল্লাহ তোমাদের জন্য একটি পথ খুলে দেবেন এবং তোমাদের অবস্থা ভালো করে দেবেন।” (সুরা আত-তাহরিম : ২)। আরেক আয়াতে তিনি বলেন, “তোমরা সত্য কথা বল, আল্লাহ তোমাদের জন্য একদম সৎ পথ নির্দেশ করবেন।” (সুরা আহজাব : ৭৫)। এসব আয়াত প্রমাণ করে, সততাই বিশ্বাসের ভিত্তি, কসমের প্রয়োজন নেই।
হাদিস শরিফেও অন্য কিছুর নামে কসম করার ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, একবার ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) তার পিতার নামে কসম করলে নবীজি (সা.) সতর্ক করে বলেন, “সাবধান! আল্লাহ তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করতে নিষেধ করেছেন। কেউ কসম করতে চাইলে সে যেন আল্লাহর নামে কসম করে, নইলে চুপ থাকে।” (বোখারি : ৬১০৮)। অন্য একটি হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে কসম করল, সে শিরক করল।” (আবু দাউদ : ৩২৫১)।
ধর্মীয় পণ্ডিতরা বলেন, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো কিছুর নামে করা কসম ইসলামে কসম হিসেবে গণ্য হয় না। ফলে তা রক্ষা করার বাধ্যবাধকতাও থাকে না এবং ভঙ্গ করলে কাফফারার প্রয়োজন হয় না। তবে যেহেতু এটি হারাম কাজ, কেউ যদি না জেনে এমন কসম করে ফেলেন, তাকে তওবা করতে হবে। আর আল্লাহর নামে কসম করে তা ভঙ্গ করলে কাফফারা দিতে হয়—যেমন ১০ জন দরিদ্রকে খাবার খাওয়ানো বা পোশাক দেওয়া, অথবা তিন দিন রোজা রাখা।
সবশেষে বলা যায়, ইসলামে কসম করার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট বিধান হলো—শুধু আল্লাহর নামেই কসম করা যাবে। অন্যথায় এটি গুরুতর পাপ হিসেবে গণ্য হবে।