চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল উইন্ডোজ 10

প্রতীকী ছবি
দীর্ঘ প্রায় এক যুগের পর আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হয়ে গেল বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ 10। মাইক্রোসফট জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ১৪ অক্টোবরের পর থেকে উইন্ডোজ 10 আর কোনো নিরাপত্তা আপডেট, বাগ ফিক্স বা টেকনিক্যাল সাপোর্ট পাবে না।
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ব্যবহারকারীর প্রিয় এই অপারেটিং সিস্টেমের সমাপ্তি প্রযুক্তি দুনিয়ায় এক যুগের অবসান হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তবে এতে অনেকের প্রশ্ন—এখনো যেসব কম্পিউটারে উইন্ডোজ 10 চলছে, সেগুলো কি একেবারে অচল হয়ে যাবে?
মাইক্রোসফটের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, উইন্ডোজ 10 চালু থাকবে, কিন্তু এতে আর নতুন কোনো ফিচার বা নিরাপত্তা আপডেট আসবে না। ফলে সাইবার আক্রমণ, ভাইরাস সংক্রমণ ও ডেটা চুরির ঝুঁকি বহুগুণ বাড়বে। প্রতিষ্ঠানটি স্পষ্ট জানিয়েছে, ১৪ অক্টোবরের পর কোনো নিরাপত্তা ত্রুটি ধরা পড়লে তার দায় তারা নেবে না।
২০১৫ সালের জুলাইয়ে চালু হওয়া উইন্ডোজ 10 মূলত উইন্ডোজ 7 ও উইন্ডোজ 8-এর সমন্বয়ে তৈরি। সে সময় মাইক্রোসফট জানিয়েছিল, এটিই হবে তাদের ‘শেষ অপারেটিং সিস্টেম’, যেটি নিয়মিত আপডেটের মাধ্যমে উন্নত করা হবে। তবে প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের কারণে প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে উন্মোচন করে উইন্ডোজ 11, যেখানে যুক্ত হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), উন্নত সিকিউরিটি, মেশিন লার্নিং ও নতুন ইউজার ইন্টারফেস।
তবে উইন্ডোজ 11 ব্যবহার করতে হলে আধুনিক হার্ডওয়্যার অপরিহার্য। ২০১৫ সালের আগে কেনা অধিকাংশ কম্পিউটারে প্রয়োজনীয় উপাদান না থাকায় এই ভার্সন চালানো সম্ভব নয়। তাই অনেক ব্যবহারকারীকে নতুন কম্পিউটার কিনতে বা পুরনো হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করতে হবে—যা ব্যয়বহুল ও জটিল সিদ্ধান্ত।
কর্পোরেট গ্রাহকদের জন্য মাইক্রোসফট ‘এক্সটেন্ডেড সিকিউরিটি আপডেট (ESU)’ সুবিধা রেখেছে, যেখানে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে আরও তিন বছর পর্যন্ত সিকিউরিটি আপডেট পাওয়া যাবে। তবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য এই সুবিধা প্রযোজ্য নয়।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্তে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীরা দ্বিধায় পড়বেন—নতুন হার্ডওয়ারে বিনিয়োগ করবেন, না কি নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে পুরনো ডিভাইসেই কাজ চালাবেন।
প্রযুক্তি গবেষণা সংস্থা ক্যানালিস রিসার্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উইন্ডোজ 10 বন্ধ হওয়ার ফলে বিশ্বজুড়ে প্রায় ২৪০ মিলিয়ন কম্পিউটার অচল হয়ে পড়বে। এসব ডিভাইসের বড় অংশ শেষমেশ ল্যান্ডফিলে ফেলা হবে, যা বৈশ্বিক ইলেকট্রনিক বর্জ্যের (ই-ওয়েস্ট) পরিমাণ আরও বাড়াবে। বর্তমানে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন টন ই-ওয়েস্ট তৈরি হয়, যার বড় অংশই পুরনো কম্পিউটার ও স্মার্টফোন থেকে আসে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মাইক্রোসফটের এই সিদ্ধান্ত একদিকে পিসি বাজারে নতুন চাহিদা তৈরি করবে, অন্যদিকে ই-ওয়েস্ট সংকট ও প্রযুক্তি ব্যয়ের চাপ আরও বাড়াবে।
উইন্ডোজ 10-এর অবসান তাই যেমন প্রযুক্তির স্বাভাবিক অগ্রযাত্রা, তেমনি এটি মনে করিয়ে দিচ্ছে—টেকসই ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজন এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।



