‘বাংলাদেশে বজ্রপাতের তীব্রতা বাড়বে’

প্রতীকী ছবি
বাংলাদেশে আগামীতে বজ্রপাতের ঘনত্ব এবং তীব্রতা আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এক বিশেষজ্ঞ। প্রাথমিক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ ও প্রতিরক্ষা অবকাঠামোর অভাবে গ্রামীণ এলাকার জনগণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আজ সোমবার জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল মান্নান বাসসকে বলেন, গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের যারা সচরাচর কৃষিকাজ ও মাছ ধরার মতো বাইরের কাজে নিযুক্ত, তারা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবং প্রতিরক্ষা অবকাঠামোর সীমিত সুযোগের কারণে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন।
তার মতে, চলমান জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ ঘন ঘন বজ্রপাতজনিত দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মান্নান বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত এবং বিজলি চমকানোর হার আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিস্থিতি বজ্রপাতের জন্য আরও অনুকূল হয়ে উঠলে, পূর্বে যেসব এলাকায় বজ্রপাতের ঘটনা কম ঘটত, সেখানে ঘন ঘন বজ্রপাত হতে পারে বলে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। প্রতি বছর ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ বজ্রপাতে মারা যাচ্ছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি।
আবহাওয়াবিদ মান্নান বলেন, বজ্রপাত বৃদ্ধির এই প্রবণতা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বজ্রপাতের আওতা ও তীব্রতা বাড়ছে।
উল্লেখ্য, গতকাল ৫ অক্টোবর দেশের চার জেলায় বজ্রপাতে অন্তত আটজনের প্রাণহানি ঘটেছে।
বজ্রপাত বৃদ্ধির মূল কারণ সম্পর্কে ড. মান্নান বলেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বজ্রপাতের ঘনত্ব এবং তীব্রতা বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, বেশ কয়েকটি গবেষণায় বাংলাদেশের প্রাক-বর্ষা মৌসুমে কনভেক্টিভ অ্যাভেইলেবল পটেনশিয়াল অ্যানার্জি ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা বজ্রপাতের তীব্রতা বৃদ্ধির ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ মান্নান বলেন, আঞ্চলিকভাবে দূষণের হার বেড়ে যাওয়ায় বায়ুর মান আরও খারাপ হয়েছে, যা বজ্রপাত বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, গবেষণায় বাংলাদেশে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি এবং বজ্রপাতের ঘনত্ব বৃদ্ধির মধ্যে একটি শক্তিশালী যোগসূত্র পাওয়া গেছে।
লম্বা গাছ কেটে ফেলায় গ্রামীণ এলাকায় বজ্রপাতের ঝুঁকি আরও বেড়েছে। গাছ কেটে ফেলার ফলে প্রাকৃতিকভাবে বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা হ্রাস পেয়েছে এবং মানুষের জন্য ঝুঁকি বেড়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
ভৌগোলিক ও ঋতুকেন্দ্রিক ঝুঁকি সম্পর্কে ড. মান্নান বলেন, বাংলাদেশ অবস্থানগত কারণেও প্রাক-বর্ষা মৌসুমে তীব্র বজ্রপাতের ক্ষেত্রে নাজুক অবস্থানে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাক-বর্ষা মৌসুমে উচ্চ আর্দ্রতা, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং বায়ুমণ্ডলীয় অস্থিরতার সংমিশ্রণে ঘন ঘন বজ্রপাতের জন্য আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
সাম্প্রতিক একটি আঞ্চলিক গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি।
গ্রামীণ অঞ্চলে ঘনবসতি এবং মাঠে বেশিসংখ্যক লোক অবস্থানের কারণে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বাড়ছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রাক-বর্ষা মৌসুমে বিশেষ করে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বজ্রপাতের হার সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৩০০ জন মানুষ বজ্রপাতে মারা যান। তাদের মধ্যে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সিলেটে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বছরে প্রায় ১২০টি বজ্রপাতের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যার এক-তৃতীয়াংশ মাটিতে আঘাত হেনেছে।
তথ্যসূত্র: বাসস