আর্থিক খাতে বড় সংকটের আশঙ্কা

ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান ব্যাসেল-৩ হঠাৎ কার্যকর করায় দেশের অর্থনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে বলে মনে করছেন শিল্প ও বাণিজ্য খাতের উদ্যোক্তারা।
নতুন নিয়মে পরপর তিন মাস ঋণের কিস্তি না দিলে গ্রাহককে খেলাপি ধরা হচ্ছে, যেখানে আগে সময়সীমা ছিল ছয় মাস। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রস্তুতিহীন অবস্থায় এই মান কার্যকর করায় ব্যাংক খাতের বিদ্যমান অস্থিরতা আরও বেড়েছে।
নীট তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, “আর্থিক খাতের কাঠামোগত দুর্বলতা দূর না করেই ব্যাসেল-৩ কার্যকর করা হয়েছে। এটি দুর্বল শিক্ষার্থীকে সাহায্য না করে পাস নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত।”
তিনি আরও বলেন, “অনেক ভালো ব্যবসায়ী নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেও নতুন ঋণ পাচ্ছেন না। সময়সীমা তিন মাসে নামিয়ে আনার ফলে অনেকে নতুন করে খেলাপি হচ্ছেন।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা—মোট ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। জুন প্রান্তিকে তা ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে বলে জানা গেলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো আনুষ্ঠানিক তথ্য প্রকাশ করেনি।
উদ্যোক্তারা বলছেন, ব্যাসেল-৩ কার্যকরের আগে আর্থিক খাতকে প্রস্তুত না করা এবং দেশের সংকটময় অর্থনীতির মধ্যে খেলাপির সময় কমিয়ে আনা এই ঋণ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করেছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, “ব্যাসেল-৩ মান গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটি হঠাৎ প্রয়োগ করলে খেলাপি ঋণ ও দেউলিয়াত্ব বাড়বে। এতে সিআইবি তালিকাভুক্ত ব্যবসায়ী সংখ্যা বেড়ে যাবে, ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন ঋণ পাওয়ার সুযোগ হারাবে।” তিনি পরামর্শ দেন, নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ঋণ পুনর্গঠন, সুদ মওকুফ ও দেউলিয়া ঘোষণার প্রক্রিয়ায় সহায়তা দিতে হবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন নিয়মে ব্যাংকগুলোকে সাব-স্ট্যান্ডার্ড, ডাউটফুল ও ব্যাড অ্যান্ড লস ঋণের বিপরীতে ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। ফলে প্রভিশন ঘাটতিতে পড়ছে অনেক ব্যাংক, যা বিনিয়োগ ও শিল্প খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, “দেশে এখন একমাত্র মুনাফাকারী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক গড়ে ওঠায় খাতজুড়ে কস্ট অব ফান্ড বেড়েছে। আগে ব্যাংক খাতকে সুশৃঙ্খল করা হোক, তারপর আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা হোক—নইলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।”
উদ্যোক্তাদের মতে, প্রস্তুতিহীন অবস্থায় ব্যাসেল-৩ কার্যকর করা ব্যাংক খাতকে সহায়ক নয়, বরং অচলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে পুরো অর্থনীতিকে।
তথ্যসূত্র: বাংলা নিউজ ২৪
