ভূমিকম্প কি আল্লাহর সতর্কবার্তা? নবী (সা.) ভূমিকম্প নিয়ে কী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন?

ভূমিকম্পকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হয়। এটি কিয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে অন্যতম, এবং আল্লাহ অতীতে বহু জাতিকে ভূমিকম্পের মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছেন। অতীতের অনেক অবাধ্য জাতি আল্লাহর আদেশ অমান্য করা, মানুষকে প্রতারণা করা, লুটপাট, দুর্নীতি এসব কারণে ধ্বংস হয়েছিল।
শোয়াইব (আ.)-এর জাতি অন্যায় ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় আল্লাহ তাদের ওপর ভূমিকম্প পাঠিয়ে ধ্বংস করেছিলেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “অতঃপর ভূমিকম্প তাদের গ্রাস করল, এবং তারা ঘরেই উপুড় হয়ে পড়ে রইল।” (সুরা আরাফ, আয়াত ৯১)
একইভাবে, লুত (আ.)-এর জাতি অবাধ্যতা ও সমকামিতার প্রসারের কারণে ভূমিকম্প ও উল্টে ফেলা শাস্তির সম্মুখীন হয়েছিল। সালেহ (আ.)-এর জাতিও আল্লাহ প্রদত্ত নিদর্শন উষ্ট্রীকে হত্যা করার অপরাধে ভূমিকম্পের শাস্তি পেয়েছিল।
আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.)ও তাঁর উম্মতকে ভূমিকম্প নিয়ে সতর্ক করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন যুদ্ধলব্ধ সম্পদ ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হবে, আমানতকে হরণ করা হবে, জাকাতকে জরিমানা মনে করা হবে, ধর্মহীন শিক্ষার প্রসার ঘটবে, স্ত্রীকে খুশি করতে গিয়ে পুরুষ মায়ের অবাধ্য হবে, বন্ধুদের অগ্রাধিকার দিয়ে বাবাকে অবহেলা করা হবে, মসজিদে হট্টগোল হবে, পাপাচারীরা নেতা হবে, নিকৃষ্ট লোক সমাজের কর্তা হয়ে উঠবে, ক্ষতির ভয় থেকে মানুষ কাউকে সম্মান দেখাবে, নর্তকী-গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপকতা দেখা দেবে, মদপান ছড়িয়ে পড়বে তখন অগ্নিবায়ু, ভূমিধস, ভূমিকম্প, চেহারা পরিবর্তন, পাথর বর্ষণসহ একের পর এক শাস্তির আলামত আসতে থাকবে, যেমন ছেঁড়া পুঁতির মালা থেকে একের পর এক দানা পড়ে যায়। (তিরমিজি, হাদিস ২২১১)
সুতরাং মুসলমানদের উচিত সমাজে পাপাচার ছড়িয়ে পড়া থেকে নিজেকে ফেরানো এবং পরিবার-পরিজনসহ অন্যদেরও সতর্ক করা। তবে ভূমিকম্পে দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে তাকে পাপিষ্ঠ হিসেবে ধরার সুযোগ নেই। নবী (সা.) ভূমিকম্পে নিহত ব্যক্তিকে ‘শহীদ’ ঘোষণা করেছেন।
আবু হুরায়রা (রা.) আরও বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে কাঁটাযুক্ত ডাল সরিয়ে দিলে আল্লাহ তা গ্রহণ করে তাঁর গুনাহ মাফ করে দেন।
রাসুল (সা.) আরও বলেন, শহীদ পাঁচ শ্রেণির: (১) প্লেগ বা মহামারীতে মৃত, (২) পেটের পীড়া বা রোগে মৃত, (৩) পানিতে ডুবে মৃত, (৪) ভূমিকম্পে চাপা পড়ে মৃত, এবং (৫) আল্লাহর পথে যুদ্ধে নিহত। (মুয়াত্তা মালেক, হাদিস ২৮৫)



