শিক্ষা
প্রধান খবর

শিক্ষক আন্দোলনে স্থবির শিক্ষা ব্যবস্থা, সমাধানে কী করছে সরকার?

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) লোগো। সংগৃহীত

বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা রাজধানীতে ক্লাস ছেড়ে আন্দোলনে নেমেছেন। তিন দফা দাবিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলন এখন শিক্ষা ব্যবস্থায় অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে।

আন্দোলনরত এক শিক্ষক বলেন, “মাত্র এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া আর পাঁচশ টাকা চিকিৎসা ভাতা। অধ্যক্ষ থেকে সুইপার—সবার জন্য একই বরাদ্দ। সরকারি শিক্ষকরা যেখানে বেতনের ৪০-৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া পান, আমরা পাই মাত্র এক হাজার টাকা।”

রবিবার আন্দোলনের সময় পুলিশের লাঠিপেটা ও টিয়ারশেল নিক্ষেপে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে শিক্ষকরা “মার্চ টু সচিবালয়” কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন।

অন্যদিকে, ঢাকা কলেজে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশের সরকারি কলেজগুলোতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এর ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি ও বেসরকারি কলেজের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে।

বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, শিক্ষকদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।

শিক্ষাবিদদের মতে, এসব আন্দোলন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত ব্যর্থতার ফল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, “স্থায়ী সমাধান না দিলে সমস্যা একটির পর আরেকটি তৈরি হবে। হঠকারি সিদ্ধান্ত ও গবেষণার অভাবেই শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন থেমে আছে।”

এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিক্ষকদের দাবি যথার্থ হলেও বাজেট অনুমোদন নির্ভর করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ভাতা বৃদ্ধির পক্ষে সুপারিশ পাঠিয়েছি। এখন সিদ্ধান্ত নেবে অর্থ মন্ত্রণালয়।”

শিক্ষকদের দাবি—মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা পুনর্নির্ধারণ। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে গত ৫ আগস্ট মাত্র পাঁচশ টাকা বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি হলে শিক্ষকরা সেটিকে ‘অপমানজনক’ উল্লেখ করে নতুন করে আন্দোলনে নামেন।

রাজশাহীর শাহ মখদুম কলেজের প্রভাষক মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের এমপিওভুক্তির তারিখ থেকে চাকরির অভিজ্ঞতা হিসাব করা হয়, কিন্তু বাস্তবে অনেকেই তার আগেই শিক্ষকতা শুরু করেছেন। এতে বড় অন্যায় হচ্ছে।”

অন্যদিকে, ঢাকা কলেজে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় আন্দোলন আরও তীব্র হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন ২০২৫’ নিয়ে যে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে, সেটি ভিত্তিহীন।”

তিনি জানান, “আইনটি এখনো প্রণয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

শিক্ষকদের আন্দোলনের ফলে বর্তমানে সারাদেশের অনেক কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত, আর শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button