লাইফস্টাইল

ইগো মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু

‘ইগো’ শব্দটির সঙ্গে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। শব্দটি ইংরেজি হলেও এখন বাংলাতেও বেশ প্রচলিত। কখনও এটি অহংকারের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, আবার কখনও আত্মমর্যাদার অংশ হিসেবে। ইগো সম্পূর্ণ খারাপ নয়, আবার পুরোপুরি ভালোও নয়—এটি আমাদের আত্মপরিচয়ের অংশ, তবে মাত্রাতিরিক্ত হলে তা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। সঠিকভাবে ইগো নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মন হয় প্রশান্ত, সম্পর্ক হয় দৃঢ়, আর জীবন হয়ে ওঠে শান্ত।

ইড, ইগো ও সুপার-ইগো: মানসিকতার তিন স্তম্ভ
বিশ্ববিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড মানুষের মনের কাঠামোকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন—
ইড (Id): প্রবৃত্তিনির্ভর অংশ, যা ক্ষুধা, কামনা, রাগ ও স্বার্থপরতার দ্বারা চালিত।
ইগো (Ego): বাস্তবতার সঙ্গে আচরণ সামঞ্জস্য করতে শেখায় এবং ইড ও সুপার-ইগোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।
সুপার-ইগো (Superego): নৈতিকতা, আদর্শ ও ভালো-মন্দের বোধ নিয়ন্ত্রণ করে।

ইগো কীভাবে কাজ করে?
ইগো হলো আমাদের মানসিক কাঠামোর সেই অংশ, যা আত্মপরিচয় ও বাস্তববোধ তৈরি করে। এটি চিন্তা ও আচরণের মধ্যে ভারসাম্য আনে।
উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি আপনাকে অপমান করে—ইড চায় আপনি পাল্টা গালাগাল করুন, সুপার-ইগো বলে চুপ থাকুন, আর ইগো বুঝিয়ে দেয় পরিস্থিতি সামলানোর যুক্তিসঙ্গত উপায়।

ইগোর ভালো দিক

  • আত্মসম্মান রক্ষা করতে শেখায়
  • নিজের সীমা ও অবস্থান নির্ধারণে সহায়তা করে
  • সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাস্তবতা বিবেচনা করতে শেখায়
  • পেশাগত জীবনে আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা বাড়ায়

ইগোর খারাপ দিক

  • অতিরিক্ত হলে মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক করে তোলে
  • সম্পর্ক ভেঙে দিতে পারে
  • ক্ষমা করতে না পারলে মানসিক চাপ বাড়ায়
  • সবসময় নিজেকে সঠিক ভাবার প্রবণতা তৈরি করে

ইগো ও সম্পর্ক: ভারসাম্যের খেলা
সুস্থ সম্পর্ক টিকে থাকে তখনই, যখন উভয় পক্ষ ইগোর দেয়াল ভেঙে একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করে। “আমি কেন আগে ফোন করব?”, “সে ভুল করেছে, আমি ক্ষমা চাইব না”—এই ধরনের মানসিকতা ধীরে ধীরে সম্পর্ককে দুর্বল করে দেয়।

ইগো নিয়ন্ত্রণের উপায়

  • আত্মপর্যালোচনা করুন: অহংকার কি বাড়ছে? নিজেকে প্রশ্ন করুন।
  • ক্ষমা শেখুন: ক্ষমা দুর্বলতা নয়, এটি মানসিক পরিপক্বতার পরিচায়ক।
  • ধৈর্য ধরুন: রাগ নয়, যুক্তি দিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করুন।
  • কৃতজ্ঞ থাকুন: কৃতজ্ঞতা মানুষকে নম্র ও সহনশীল করে।
  • পরামর্শ নিন: প্রয়োজনে মনোবিদ বা কাউন্সেলরের সহায়তা নিন।

ইগোকে দমন নয়, নিয়ন্ত্রণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ—কারণ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত ইগোই আমাদের আত্মসম্মান, যুক্তি ও ভারসাম্যের মূলভিত্তি।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button