কোষ্ঠকাঠিন্যের মূল কারণ কী? এড়িয়ে চলবেন যেসব খাবার

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে মলত্যাগ কমে যায়, পেট ফোলাভাব, গ্যাস ও ব্যথা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পানি পান ও বাথরুমে সময় দেওয়ার পরও অনেক সময় উপশম পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খাদ্যাভ্যাসই এর মূল কারণ। তাই দৈনন্দিন খাবারে সচেতনতা জরুরি।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সাধারণ লক্ষণ
এটি এক ধরনের হজমজনিত সমস্যা, যা অনিয়মিত মল প্রবাহ ও ত্যাগের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ব্যক্তিভেদে লক্ষণ ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত দেখা যায়—
- মল প্রবাহে অসুবিধা
- শক্ত মল
- মলত্যাগে ব্যথা বা টান পড়া
- সপ্তাহে তিন দিনের কম মলত্যাগ
- রক্তপাত
- পিঠের নিচে অস্বস্তি
২০১৮ সালে মিসৌরি মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এসব লক্ষণকে সাধারণ উপসর্গ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
হজমে খাদ্য পরিকল্পনার ভূমিকা
ডায়েট বা খাদ্য পরিকল্পনা হজম তন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। ভাজাপোড়া খাবার সাময়িকভাবে ভালো লাগলেও এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রধান কারণ। সায়েন্স ডিরেক্ট জার্নাল-এর এক সমীক্ষা অনুযায়ী, আঁশ, ফল ও শাকসবজি অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং ভালো ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে।
যেসব খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ায়
১. মিল্ক চকলেট
দুধের চকলেটে উচ্চমাত্রার চর্বি থাকে, যা হজমে সময় নেয় এবং মল শক্ত করে। ইউরোপিয়ান জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল-এর গবেষণায় দেখা যায়, অতিরিক্ত চকলেট খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ায়।
২. ক্যাফিনসমৃদ্ধ পানীয়
কফি, চা, সোডা ও শক্তিবর্ধক পানীয়তে থাকা অতিরিক্ত ক্যাফিন কোলন থেকে তরল শুষে নেয়, ফলে মল শুকিয়ে যায়। ভারতের নদিয়া জেলার ফোর্টিস হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিস্ট ডা. সুশ্রুত সিং জানান, সীমিত পরিমাণ ক্যাফিন মলত্যাগে সহায়ক হলেও অতিরিক্ত গ্রহণ উল্টো প্রভাব ফেলে।
৩. প্রক্রিয়াজাত ও হিমায়িত খাবার
সালামি, সসেজ, ফ্রোজেন ফুড ও রেডি-টু-কুক আইটেমে অতিরিক্ত সোডিয়াম, চিনি ও সংরক্ষক থাকে, যা হজমনালীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে। আমেরিকান জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি-এর গবেষণায় প্রক্রিয়াজাত খাবারকে কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ বলা হয়েছে।
৪. রেড মিট
ভেড়া, খাসি বা গরুর মাংসে প্রোটিন ও চর্বির মাত্রা বেশি, কিন্তু আঁশ কম। আমেরিকান জার্নাল-এর গবেষণা অনুযায়ী, এই ধরনের মাংস হজমে সময় নেয় এবং মলত্যাগে বাধা সৃষ্টি করে।
৫. ক্র্যাকার্স ও ময়দাজাত খাবার
বেক করা ক্র্যাকার্স বা বিস্কুট মচমচে হলেও মলত্যাগের গতি ধীর করে। নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়তে পারে।
৬. গ্লুটেনসমৃদ্ধ খাবার
গম, সুজি, রাই ও বার্লিতে থাকা গ্লুটেন কিছু মানুষের জন্য হজমে বাধা সৃষ্টি করে। স্ট্যাটপার্লস জার্নাল-এর গবেষণায় দেখা যায়, সেলিয়াক রোগীদের জন্য গ্লুটেন খাবার কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ায়।
৭. ভাজা ও ফাস্টফুড
অতিরিক্ত তেল, সোডিয়াম ও কৃত্রিম সংরক্ষকযুক্ত ফাস্টফুড খাবারের প্রবাহকে ধীর করে দেয়, ফলে মল শক্ত হয়। নিয়মিত ফাস্টফুড খাওয়া শুধু কোষ্ঠকাঠিন্য নয়, হৃদরোগ ও স্থূলতার ঝুঁকিও বাড়ায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হজম সুস্থ রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি, আঁশযুক্ত খাবার ও প্রাকৃতিক উপাদানসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা এবং প্রক্রিয়াজাত, চর্বিযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার থেকে দূরে থাকা সবচেয়ে কার্যকর উপায়।



