
নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে হওয়া ভারী বৃষ্টিতে বগুড়ায় অন্তত ৩ হাজার ৬৯৩ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে আমন ধান, আলু, পেঁয়াজ, মরিচ, কলাসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। এই ফসল উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত ৩৪ হাজার ৯৫০ জন কৃষক ক্ষতির মুখে রয়েছেন।
স্থানীয়দের কাছে জানা গেছে, বৃষ্টিপাতে আক্রান্ত জমির অধিকাংশই এখনও পানিতে ডুবে আছে। এতে করে ফসল সম্পূর্ণ রুপে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন ওই জমির সাথে সংশ্লিষ্ট কৃষকরা।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
বগুড়ার আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় মোন্থা দেখা দেয়। এর প্রভাবে গত সপ্তাহে টানা চার দিনে বগুড়ায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
জেলার কৃষিবিভাগের তথ্য বলছে, বগুড়ায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৪১৬ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতে মধ্যে বৃষ্টিপাতে আক্রান্ত ২৯৯৫ হেক্টর। ৩০৪৭ হেক্টর শাকসবজির মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৪৬৬ হেক্টর জমিতে।
এখন পর্যন্ত জেলায় আগাম আলুর আবাদ হয়েছে ৩২৮ হেক্টর জমি। কিন্তু বৃষ্টিতে ৮৪ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। পেঁয়াজের ১৯৯ হেক্টর জমির মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ১৭ হেক্টর। ৩২৫৭ হেক্টর জমির মরিচের মধ্যে ৬৬ হেক্টর জমি পানিতে আক্রান্ত হয়ে আছে। পুরো জেলায় ২৪০ হেক্টরের মধ্যে ১০ হেক্টর জমির আক্রান্ত। এ ছাড়া বিভিন্ন ফসলের প্রায় ৫৫ হেক্টর জমি বৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
জেলার কৃষি বিভাগ বলছে, ভারী বৃষ্টিতে বগুড়ার ১২ উপজেলার মধ্যে ধুনটে সবচেয়ে ১৭০৫ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এর পরে সারিয়াকান্দির ৩৫৮, বগুড়া সদরের ৩০০, শেরপুরে ২৭০ হেক্টর জমি আক্রান্তের তালিকায় আছে। এছাড়া বাকি উপজেলাতেও কমবেশি আক্রান্ত হয়েছে।
ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ী, মথুরাপুরসহ সব ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অসংখ্য কৃষক। উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন, জানান, এখন ধান চাষে অনেক খরচ। এমন সময় বৃষ্টি হয় যখন ধান পোক্ত হয়ে গেছে। এই অবস্থায় ধানের ফলন কমে যাবে।
একই গ্রামের আব্দুল মোতালেব জানান, আমার জমির অর্ধেক ধান পড়ে গেছে। আবার কিছু জমিতে আগাম শীতকালীন সবজির আবাদ করা হয়েছে। সেই জমিও পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের কৃষক রাজু মিয়া। তিনি জানান, আগাম জাতের সবজি চাষ করেছি, আর কিছুদিন পর বাজারে তুলতে পারতাম। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে, এখন সেগুলো নষ্ট হওয়ার পথে।
শেরপুর উপজেলার কুসুম্বি ইউনিয়নের কৃষক ওমর ফারুক আলুর আবাদ করেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টিতে সেই জমি পানিতে ডুবে আছে। তিনি জানান, টানা বৃষ্টির পর শুক্রবার রাতে যে বৃষ্টি হলো, এতে আগাম আলুর খেতগুলো বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। রোপণ করা আলুবীজ নষ্ট হবে। এছাড়াও মরিচ গাছগুলোর ক্ষতি হয়েছে।
জমির ফসল থেকে অর্থ উপার্জনের আগ মুহুর্তে প্রাকৃতিক এ দুর্যোগে দিশেহারা জেলার কৃষকরা। কৃষি বিভাগের তথ্যে জানা গেছে বৃষ্টিপাতে বগুড়ায় ক্ষতির মুখে রয়েছেন ৩৪ হাজার ৯৫০ জন কৃষক।
পানি দ্রুত নিষ্কাশনের কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ জানান, আবহাওয়া ভালো হলে দুই-তিন দিনের মধ্যে জমির পানিতে নুয়ে পড়া ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। তবে হেলে পড়া ধান গাছগুলো ঝুঁটি বেঁধে দিলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে।



