আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যেভাবে বাজেট তৈরি করবেন
টাকা-পয়সার গতি ঠিক রাখতে এবং জীবনে স্বচ্ছলতা নিয়ে আসতে বাজেট অত্যন্ত কার্যকর ব্যাপার। আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন তাহলে ব্যবসার শুরু থেকেই আপনাকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
বাজেট তৈরির মানে হলো আপনি কখন কোন খাতে কী পরিমাণ খরচ করবেন তা আগে থেকে ঠিক করে রাখা। আর আয় বুঝে ব্যয় করা মানে আপনার ইনকাম যত তার মধ্যে আপনি ব্যয় করছেন কিনা সে ব্যাপারে সচেতন থাকা।
বাজেট তৈরি ও মানি ম্যানেজমেন্টের সময় খেয়াল রাখার বিষয় হলো আপনি পরিমিত ব্যয় করছেন কিনা। পরিমিত ব্যয় দরকার, কারণ না হলে আপনি বুঝতেও পারবেন না কিন্তু যা ইনকাম করবেন তার সবই খরচ হয়ে যাবে।
বাজেট আর মানি ম্যানেজমেন্ট বুঝতে হলে আগে জানতে হবে খরচের ধরনগুলি। খরচ দুই ধরনের, ফিক্সড আর আনফিক্সড।
ফ্যামিলি বাজেটে যেসব খরচ ফিক্সড হতে পারে তা হলো:
• বাড়ি ভাড়া
• গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, ফোন বা ইন্টারনেটের বিল
• কাউন্সিল ফি বা জমির ট্যাক্স
• স্কুল বা আনুষঙ্গিক খরচ
• স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট খরচ বা গাড়ি, বাড়ির ইন্সুরেন্স
• ক্রেডিট কার্ড ও ব্যক্তিগত লোন পরিশোধ
আবার, পারিবারিক বাজেটে পরিবর্তনশীল বা আনফিক্সড খরচ হতে পারে:
• খাবার
• বাড়ির মেইনটেনেন্স খরচ ও গৃহস্থালির জিনিসপত্র
• বাচ্চাদের স্কুলের ইউনিফর্ম, পাঠ্যবই, স্টেশনারি আইটেম
• চিকিৎসা খরচ
• গাড়ি মেরামত, পেট্রোল খরচ
• পাবলিক ট্রান্সপোর্টের খরচ
• ব্যক্তিগত জিনিস যেমন কাপড়, চুল কাটা
• ছুটির দিনে ঘুরতে যাওয়া বা মুভি দেখতে যাওয়ার খরচ
• বিনোদন
• উপহারসামগ্রী কেনা
• নিজের ও পরিবারের জন্য বিশেষ কোনো ট্রিটের ব্যবস্থা করা
ইনকাম আর ব্যয়ের সামঞ্জস্য থাকলে বাড়তি খরচগুলিও সহজে সামলাতে পারবেন।
বাড়তি খরচ সামলাবার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো বাড়তি খরচের জন্যই আলাদা ফান্ড রাখা।
প্রতিনিয়ত অল্প করে যখন যেরকম পারছেন জমাতে থাকুন। তাতে যেকোনো ছোটখাটো খরচ খুব সহজেই সামাল দিতে পারেন।
.
# বাজেট পরিচালনা ও সঞ্চয় যেভাবে করবেন
বাজেটই আপনাকে বলে দেবে, আপনি উপার্জনের চেয়ে বেশি ব্যয় করছেন না কম।
যদি বেশি ব্যয় করেন তাহলে একটি সাধারণ সেভিংস প্ল্যান আপনার এই খরচ কমাতে সাহায্য করবে। আর যদি উপার্জনের চেয়ে কম ব্যয় করেন তখনও কিন্তু একটি সেভিংস প্ল্যান আপনার বাড়তি টাকা জমাতে সাহায্য করবে। যেটা পরবর্তীতে হাজারো অপ্রত্যাশিত ব্যয়, জরুরি অবস্থা বা কোনো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারবেন।
তার আগে পরিবারের সাথে বসে আলোচনা করে দেখুন বিভিন্ন খাত থেকে কীভাবে খরচ কমানো যায়।
# এ ক্ষেত্রে যা করবেন
একটি সঞ্চয় বাফার তৈরি করুন। নিজের চাহিদা মেটাতে টাকা জমানোর আগে, জরুরি পরিস্থিতিতে যেন কাজে লাগাতে পারেন সেজন্য একটি বাড়তি সঞ্চয় শুরু করুন। উদাহরণস্বরূপ, আলাদা সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা জমাতে পারেন যেন অপ্রত্যাশিত কোনো পরিস্থিতিতে বা জরুরি অবস্থায় হাতে টাকা থাকে আপনার।
কোন জিনিসের জন্য সঞ্চয় করছেন তা স্থির করুন। লক্ষ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। লক্ষ্য পূরণের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করুন। তবে যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবতার সাথে মিল রেখে নিন। এতে, মানসিক চাপ এড়াতে পারবেন।
নতুন একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন যেটা আপনার মূল অ্যাকাউন্ট থেকে আলাদা হবে। যে অ্যাকাউন্টে শুধু লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যেই টাকা জমাবেন।
আপনার মূল অ্যাকাউন্ট থেকে চাইলে এই অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ অ্যামাউন্ট ট্রান্সফারও করতে পারেন, এককালীন অথবা নিয়মিত। পরিচিত ব্যাংক কর্মকর্তা বা অভিজ্ঞ কারো সাথে এ বিষয়ে কথা বলে নিতে পারেন।
সেভিংস প্ল্যান তৈরির পর পুরোটা ভালোমতো দেখে নিন। বুঝতে চেষ্টা করুন আপনার পরিবারের ওপর এর প্রভাব কেমন হবে।
পরিকল্পনার কোনো অংশ নিয়ে যদি কনফিউশন থাকে তাহলে হিসাবটা আবার করুন এবং এ বিষয়ে জানে এমন কারো পরামর্শ নিন।