বগুড়া জেলা
প্রধান খবর

বিচারপ্রার্থীকে মারধর, আইনজীবীর বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ নেয়নি’ বগুড়া বার সমিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়ার আদালত চত্বরে আইনজীবীর হাতে বাবা-ছেলে মারধরের ঘটনায় অভিযোগ দিতে এসে ফিরে যেতে হয়েছে বিচারপ্রার্থীকে। রোববার (২ নভেম্বর) বিকেলে লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে তা গ্রহণ করেননি অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম।


এ বিষয়ে বারের সাধারণ সম্পাদকের ভাষ্য, আইনজীবীর গায়ে হাত তোলা হয়েছে। এই ঘটনার আর কোনো বিচার নেই।‘ তবে বারের সভাপতি জানিয়েছেন,সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ না নেওয়ার কেউ না। আমার কাছে দিলে অভিযোগ দেখে আমি নোটিশ করব।’


গত ২৬ অক্টোবর দুপুরে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার জিয়ানগর এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে সৈকতকে কয়েকজন আইনজীবীর হাতে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত হন। এই শফিকুল ইসলাম তার সাবেক স্ত্রী কাজলী বিবির বিরুদ্ধে ১৪ লাখ টাকার প্রতারণার মামলা করেন। সেই মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী আ ন ম বজলুর রশিদ শাহিন ও তার ঘনিষ্টজনেরা তাদের মারধর করেন।


এ ঘটনায় সেদিনেই অনলাইন নিউজ পোর্টাল বগুড়া লাইভ-এ একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রচার হয়। এতে দেখা যায়, আইনজীবী বজলুর রশিদ শাহিন আদালতের সামনের রাস্তায় মামলার বাদি শফিকুলকে চড় মেরে কলার ধরে টানতে থাকেন। টেনে তাকে আদালতের আইনজীবীদের ভবনের দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। এ সময় একাধিক আইনজীবী শফিকুল ও তার ছেলেকে হাত, আখের ডাল দিয়ে মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাদের দুজনকে বারের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের অফিসে নিয়ে যান আইনজীবীরা। সেখানে চড় থাপ্পড় ও স্যান্ডেল দিয়ে মারা হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শফিকুল।


মারধরের বিষয়ে অ্যাডভোকেট বজলুর রশিদ শাহিন বলেন, শফিকুল আমার মক্কেল কাজলী বিবির ওপর এর আগেও হামলা করেছে। সেদিনও (২৬ অক্টোবর) শফিকুল তার সাবেক স্ত্রীকে মারধরের পরিকল্পনা করেছিল। এমন অবস্থা হতে পারে বুঝে আমি তাকে ঝামেলা করতে নিষেধ করি। আর বলি কোনো কথা থাকলে আমার চেম্বারে আসতে। এ সময় সে উত্তেজিত হয়ে আমার বুকে ধাক্কা দেয়। এটা দেখে আমার জুনিয়র এগিয়ে গেলে তাকেও ঘুষি মারে।


এরপর আমি তার কলার চেপে ধরে বারের সেক্রেটারির কক্ষে নিয়ে যাই। এ সময় চত্বরের রাস্তায় অনেকে চড় থাপ্পর মেরেছে। কিন্তু আমি তাকে কোনো মারধর করিনি। তবে সেক্রেটারির কক্ষে স্যান্ডেল দিয়ে মারধরের কারণ জানতে চাইলে কোনো জবাব দেননি আইনজীবী শাহিন।


আইনজীবী বজলুর রশিদ দাবি করেন, চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি শফিকুল ইসলাম তার সাবেক স্ত্রীকে মারপিটের কারণে অভিযোগ দাখিল করেছিলেন তিনি। এবারেও ঘটনাটি নিয়ে আরেকটি অভিযোগ করেছেন আইনজীবী শাহিন। এতে শফিকুল, তার ছেলে সৈকত ও ভগ্নিপতি তাজিলকে অভিযুক্ত করে হয়েছে, তারা আসামি পক্ষের আইনজীবীর সঙ্গে আক্রমনাত্মক ও অশালীন আচরণ করেছেন।


কিন্তু অভিযোগের কোথাও বিচারপ্রার্থীকে মারধরের কথা উল্লেখ করেননি এই আইনজীবী।


তবে আইনজীবীর এমন বক্তব্য পুরো ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন পেশায় অটোরিকশা চালক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার ছেলে সৈকত তার মায়ের কাছে মোবাইল নিতে এগিয়ে যায়। ওই সময় অ্যাডভোকেট শাহিন তাকে ধাক্কা দেয়। তখন আমি এগিয়ে গেলে আমাকে মারধর শুরু করেন। আমি তার গায়ে হাত তুলিনি।

শফিকুলের ভগ্নিপতি তাজিল ইসলাম বলেন, মারধরের দিনে সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের অফিসে শফিকুল ও তার ছেলেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তার সামনেই এদের মারধর করা হয়। তিনিও মেরেছেন।


রোববার অভিযোগ দাখিলের বিষয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, বিকেলে আমরা মারধরের বিচার চেয়ে বার অ্যাসোসিয়েশনে একটি অভিযোগ দিতে যাই। তখন সেখানে বারের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। তিনি আমাদের অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেন। বলেন, এটার কোনো অভিযোগ নেয়া যাবে না।

এসব বিষয়ে জানতে অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, ওরা এসেছিল, আমি তাদের অভিযোগ নেইনি। ওরা আমাদের আইনজীবীদের গায়ে আগে হাত তুলেছে। একজনের ঠোঁট ফেটে দিয়েছে। ওদের কোনো বিচার করা যাবে না। আর আমিতো সেদিনেই ওদের বিচার করে দিয়েছি। আবার কিসের বিচার?


তবে অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আতাউর রহমান মুক্তা বলেন, আজকে একটি অভিযোগ দেয়ার কথা। আমি তাদের অফিসে অভিযোগ জমা দিয়ে চলে যেতে বলেছি। সাধারণ সম্পাদকতো অভিযোগ না নেয়ার কেউ না। অভিযোগ দেখে নোটিশ আমি করব। বিচারও আমি করব।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button