আন্তর্জাতিক খবর

পাকিস্তানের হামলায় ৩ আফগান ক্রিকেটারসহ নিহত ৪০

পাকিস্তানের চালানো বিমান হামলায় আফগানিস্তানের তিনজন ক্রিকেটারসহ অন্তত ৪০ জন নিহত হওয়ার পর আসন্ন ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। আগামী নভেম্বর মাসে পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে এই সিরিজটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) গভীর রাতে পাকিস্তানি বিমানবাহিনী কান্দাহারের স্পিন বোলদাক জেলার আবাসিক এলাকায় হামলা চালায়। টোলো নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এসিবি এক বিবৃতিতে হামলাটিকে “কাপুরুষোচিত ও মানবতাবিরোধী” বলে আখ্যা দিয়ে নিহতদের স্মরণে সিরিজটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

বিবৃতিতে বোর্ড জানায়, “আমাদের খেলোয়াড়, নাগরিক ও ক্রীড়া সম্প্রদায়ের ওপর এই আক্রমণ অকল্পনীয়। শ্রদ্ধা ও প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

এসিবির তথ্যমতে, নিহত তিন ক্রিকেটার হচ্ছেন পাকতিকা প্রদেশের উরগুন জেলার কবির, সিবগাতুল্লাহ এবং হারুন। তারা প্রাদেশিক রাজধানী শারানায় একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলে ফেরার পথে উরগুনে স্থানীয় একটি জমায়েতে অংশ নেন, যেখানে হামলাটি ঘটে। এতে আরও পাঁচজন সাধারণ নাগরিক নিহত ও সাতজন আহত হন।

আফগান বোর্ড এই ঘটনাকে “আফগান ক্রীড়া পরিবার ও জাতীয় গৌরবের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি” বলে উল্লেখ করেছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলাটি সরাসরি বেসামরিক আবাসিক এলাকায় চালানো হয়, ফলে হতাহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে।

স্পিন বোলদাক জেলার জনস্বাস্থ্য প্রধান করিমুল্লাহ জুবাইর আঘা বলেন, “বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। গত রাতের বিমান হামলায় আমরা ৪০ জন নিহত ও ১৭০ জন আহতের খবর পেয়েছি। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”

এই ঘটনার পর আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত উত্তেজনা আরও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দা ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করে ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক এলাকাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।

হাজী বাহরাম নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমি এমন অন্যায় কখনও দেখিনি। যারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে, তারা আমাদের নারী, শিশু ও ঘরবাড়িতে বোমা ফেলেছে। এই সমস্যা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা উচিত ছিল।”

আরেক আহত ব্যক্তি নুরগালি জানান, “এখানে কোনো সামরিক উপস্থিতি ছিল না। শুধু বেসামরিক মানুষ ও স্থানীয় বাজার ছিল, তবুও হামলা চালানো হয়েছে।”

টোলো নিউজ জানিয়েছে, বিমান হামলার পাশাপাশি সীমান্ত পেরিয়ে আর্টিলারি গোলাবর্ষণও হয়, যা নক্লি, হাজী হাসান কেলয়, ওয়ারদাক, কুচিয়ান, শোরাবাক ও শহীদসহ একাধিক বেসামরিক এলাকায় আঘাত হানে। এতে বহু বাড়িঘর ধ্বংস ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। নিহতদের স্পিন বোলদাকের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি আপাতত শান্ত থাকলেও এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button