
ইসলামে জুমার দিনকে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মুসলমানদের কাছে এটি সাপ্তাহিক ঈদের দিন, যার ইবাদত ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতোই মর্যাদাসম্পন্ন। রাসূলুল্লাহ (সা.) জুমার দিনে আগেভাগে মসজিদে উপস্থিত হওয়ার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন, যা একাধিক হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
ইবনে মাজাহের (হাদিস নং ১০৯৮) বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদ।” অন্য এক হাদিসে তিনি আরও বলেন, “আল্লাহর কাছে জুমার দিন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতোই শ্রেষ্ঠ এবং মর্যাদাসম্পন্ন।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১০৮৪)।
সহীহ বুখারী (৮৮৭) ও সহীহ মুসলিম (৮৫০)-এর হাদিস অনুযায়ী, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে প্রথম প্রহরে মসজিদে যায়, সে যেন একটি উট কোরবানি করার সওয়াব পায়। দ্বিতীয় প্রহরে যাওয়া ব্যক্তি গাভী, তৃতীয় প্রহরে যাওয়া ব্যক্তি ভেড়া, চতুর্থ প্রহরে যাওয়া ব্যক্তি মুরগি, আর পঞ্চম প্রহরে যাওয়া ব্যক্তি একটি ডিম দান করার সওয়াব পায়। ইমাম খুতবায় উঠলে ফেরেশতারা খুতবা শুনতে বসে পড়েন।
পবিত্র কুরআনেও জুমার গুরুত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে মুমিনগণ! যখন নামাজের আহ্বান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) এগিয়ে যাও এবং দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে।” (সুরা জুমা, আয়াত ৯)।
হাদিস অনুযায়ী, জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন দোয়া কবুল হয়। যে মুসলিম সে সময়টি পেয়ে দোয়া করবে, আল্লাহ তা কবুল করবেন। অধিকাংশ আলেমের মতে, এ সময়টি আছরের শেষ ভাগে। (আবু দাউদ: ১০৪৮; নাসাঈ: ১৩৮৯)।
এই দিনেই আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেন, তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং একই দিনে পৃথিবীতে পাঠান। এমনকি কিয়ামতও সংঘটিত হবে জুমার দিনেই। হাদিসে আরও উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি জুমার দিনে বা রাতে মৃত্যুবরণ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে কবরের ফেতনা থেকে রক্ষা করবেন। (তিরমিজি: ১০৯৫; মিশকাত: ১৩৬৭; আহমদ: ১১/১৪৭)।
অতএব, জুমার দিন শুধু ইবাদতের সময় নয়; এটি আত্মশুদ্ধি, দোয়া, ও আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার বিশেষ সুযোগের দিন।



