
ভারতের নয়াদিল্লিতে নির্বাসনে থাকা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়া হলে দলটির লাখ লাখ সমর্থক ভোট বয়কট করবে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ই-মেইলে পাঠানো উত্তরে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা শুধু অন্যায্যই নয়, বরং “আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।”
১৫ বছর টানা ক্ষমতায় থাকার পর ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র নেতৃত্বে হওয়া রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। তার বিদায়ের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “পরবর্তী সরকারের অবশ্যই নির্বাচনী বৈধতা থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের লাখ লাখ সমর্থক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। একটি কার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থা চাইলে এমন সিদ্ধান্ত চলতে পারে না।”
তিনি আরও জানান, তার দলকে বাদ দিয়ে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, সেই সরকারের সময় তিনি দেশে ফিরবেন না এবং আপাতত ভারতে অবস্থান করবেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের আশা
নিবন্ধন স্থগিত থাকা আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া হলেও শেখ হাসিনা এখনো আশা করছেন, “শুভবুদ্ধির উদয় হবে” এবং দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের সমর্থকদের অন্য দলকে ভোট দিতে বলছি না। আমরা এখনো আশা করি, আমাদের নিজেদেরই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ মিলবে।”
তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো ধরনের নেপথ্য যোগাযোগ চলছে কি না—সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।
অন্যদিকে, অধ্যাপক ইউনূসের মুখপাত্ররা রয়টার্সের অনুরোধে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
অভিযোগ ও প্রতিক্রিয়া
মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ভিন্নমত দমনের অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও, শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে রূপান্তরিত করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত। তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো জয়লাভ করেছিলেন, যদিও সে নির্বাচন বিরোধী দলগুলো বর্জন করেছিল।
তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা করেছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের আন্দোলনের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয় এবং কয়েক হাজার আহত হয়—যা মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত।
শেখ হাসিনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এসব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাটক। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা চলছে।”
দেশে ফেরার পরিকল্পনা নেই
নির্বাসনে থেকেও শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে এলে আওয়ামী লীগ আবারও দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে—সরকারে হোক বা বিরোধী দলে। তবে তার পরিবারের নেতৃত্ব জরুরি নয়।
তিনি বলেন, “এটা আমার বা আমার পরিবারের ব্যাপার নয়। আমরা সবাই চাই, বাংলাদেশের সাংবিধানিক শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরুক। কোনো ব্যক্তি বা পরিবার দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না।”
১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তিন ভাইকে হারানো শেখ হাসিনা বর্তমানে দিল্লিতে “মুক্তভাবে” বসবাস করছেন, তবে পরিবারের সহিংস ইতিহাসের কারণে সতর্ক আছেন বলে জানান। কয়েক মাস আগে লোধি গার্ডেনে হাঁটার সময় তাকে দেখা গিয়েছিল—সঙ্গে ছিলেন নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে পরিচিত দুই ব্যক্তি।
তার পাশ দিয়ে যাঁরা যাচ্ছিলেন, তাঁদের প্রতি তিনি মাথা নেড়ে অভিবাদন জানাচ্ছিলেন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা


